Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:05 pm

আওয়ামী লীগের না হলে এলসিও খুলতে ‘পারছেন না’ ব্যবসায়ীরা: আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলার সংকটের এ সময়ে ব্যবসায়ীরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত না থাকলে পণ্য আমদানিতে ‘এলসি খুলতে পারছেন না’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার দৃষ্টিতে বাজারে ‘সরবরাহ লাইন’ পুরোপুরি ক্ষমতাসীন দলের লোকদের হাতে। এভাবেই তারা বাজার ‘নিয়ন্ত্রণ করছে’। বিএনপি নেতার ভাষায়, এ ‘আওয়ামী অর্থনীতির মডেল’ই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু বলেন, ‘প্রত্যেক দিন বাজারে লুটপাট করে যারা দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে তারা আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেটের লোকজন। আপনারা দেখবেন, যারা এলসি খুলতে পারছে, আমদানির জন্য, তারা শুধু আওয়ামী লীগের লোকজন। ডলার দেয়া হচ্ছে তাদের দলীয় লোকজনকে এলসি খুলে পণ্য আমদানি করার জন্য। সাধারণ আমদানিকারকরা কিন্তু পণ্য আমদানি করতে পারছে না। কারণ তাদের ডলার দেয়া হচ্ছে না। আর যারা ডলার নিয়ে এলসি খুলে পণ্য আমদানি করছে তারাই উচ্চমূল্যে আমদানিকৃত পণ্য বাজারে বিক্রি করছে।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা এ নেতা বলেন, ‘যাদের হাতে সাপ্লাই-তারা ক্ষমতাসীন দলের লোকজন, তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। যে কারণে আমদানিকৃত সমস্ত পণ্যের নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতেই চলে গেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে আওয়ামী অর্থনীতির মডেল যা তারাই সৃষ্টি করেছে। আর এর ফল দিতে হচ্ছে, মাসুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে।’

অর্থনীতিতে ‘বিপর্যয়’ চলছে বলেও মনে করেন বিএনপির এ নেতা। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ধ্বংস করে দিয়ে এক শতাংশের কম মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে আজকে। এই সম্পদ শুধু বাংলাদেশে পুঞ্জীভূত হচ্ছে না, এই সম্পদ এরা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, টাকা পাচার করে কানাডা, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, তুরস্কে সম্পদ করছে। সারা বিশ্বে আওয়ামী লীগের লোকজনরা সম্পদ পুঞ্জীভূত করছে। বাংলাদেশের

অর্থনীতির যে মডেল এখন আছে এই মডেল হচ্ছে আওয়ামী লীগের লুটপাটের মডেল। অর্থাৎ জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে যাবে ট্যাক্সের মাধ্যমে, ভ্যাটের মাধ্যমে, উচ্চ গ্যাসের মূল্য, উচ্চ বিদ্যুতের মূল্য, উচ্চ তেলের মূল্য, উচ্চ দ্রব্যমূল্যের মাধ্যমে জনগণের পকেট থেকে টাকা নিয়ে যাবে। এ টাকা তাদের দলীয় লোকজন লুটপাট করবে, বিদেশে পাচার করবে।’

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকার হটানোর আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার ডেরেক শোলের সফর নিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘তিনি (ডেরেক শোলে) পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছেন যে দেশে গণতন্ত্র নিন্মগামী বা নিচে চলে যাচ্ছে। গণতন্ত্রহীন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিন্মগামী থাকবে, সম্পর্ক আস্তে আস্তে কমে আসবে, সহযোগিতা কমে আসবে। অত্যন্ত কঠিন কথা। বাংলাদেশের মাটিতে বসে এই কথা উনি বলেছেন। মানবাধিকার প্রশ্নে কোনো ‘আপস নাই’ বলেছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যতীত কোনো গণতন্ত্র চলতে পারে না- এসব কথা ঢাকায় বসে উনারা বলেছেন। কত অপমানজনক। যারা গণতন্ত্রকামী দেশ, যারা মানবাধিকারে বিশ্বাস করে, যারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, যারা মানুষের নিরাপত্তায় বিশ্বাস করে, যারা বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, আজকে তারা এই কথাগুলো বলছেন।’

এদিকে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে ‘বিএনপির কোনো মাথা ব্যথা নাই’ বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা হচ্ছে, এখানে একটি অবৈধ দখলদার সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে, দেশ দখল করে বসে আছে। এই দখলদাররা কাউরে প্রধানমন্ত্রী বানাইছে, কাউরে মন্ত্রী বানাইছে, কাউরে এমপি বানাইছে। তো আরেকটা রাষ্ট্রপতি বানাইছে একটা দখলদার। এদের আইনের কোনো বালাই নেই, এখানে আইনের প্রশ্ন আসছে না। যারা একে বানাচ্ছে তারাই দখলদার, তারা অবৈধ। তাহলে কারে রাষ্ট্রপতি বানাইল, কারে প্রধানমন্ত্রী বানাইল, কারে মন্ত্রী বানাইল, কারে এমপি বানাইল এটা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথা ব্যথা নেই, বিএনপিরও নেই। এটা নিয়ে আলোচনা করারও দরকার নেই।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের আয়োজনে তেল-গ্যাস-দ্রব্যেমূল্য বৃদ্ধি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ আলোচনা সভা হয়।

সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ, তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান, জাগপার আসাদুর রহমান খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার এতে বক্তব্য দেন।