নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী দল’ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তাহলে বাংলদেশ ‘টিকবে না’। তাই তাদের কোনোমতেই ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। ওয়াশিংটনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও পরে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল কুমার গুপ্তের পঞ্চদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে বাংলাদেশ ভাসানী অনুসারী পরিষদের আয়োজনে এই আলোচনা সভা হয় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে। সুনীল কুমার গুপ্ত ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল মারা যান।
গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসির রিজ কার্লটন হোটেলের হলরুমে প্রবাসীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনি, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীরা যাতে আর কখনও ক্ষমতায় ফিরতে না পারে, তা নিশ্চিত করুন।’ এর জবাব দিয়ে আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “ওয়াশিংটনে বর্তমান ‘অবৈধ সরকার’, তার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, কোনোমতেই স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। আমিও একই কথা বলিÑকোনোমতেই স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে আওয়ামী লীগ আজকে ‘স্বাধীনতার বিরুদ্ধে’ অবস্থান নিয়েছে।” আওয়ামী লীগকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলার কারণ ব্যাখ্যা করে ফখরুল বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের যে লক্ষ্য ছিল, যে আশা ছিল, যে আকাক্সক্ষা ছিলÑএকটা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, একটা বহুদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা, সেটাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়ে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেই পুরোনো কায়দায়। এই কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, এই সরকার আজকে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এই সরকার আজকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এই সরকার আজকে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যে সরকার মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারে না, যে সরকার দেয়ালের লিখন দেখতে পারে না, যে সরকার মানুষের প্রয়োজন বুঝতে পারে না, তাকে আমরা গণশত্রু ছাড়া আর কী বলতে পারি?’
‘তারা ফিরলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না’ জাতির অস্তিত্ব ‘বিপন্ন হয়ে পড়েছে’ কথাটি সব মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান ফখরুল। তিনি বলেন, “আজকে আবার যদি ওই ‘গণতন্ত্রবিরোধী’, ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ শক্তিরা ক্ষমতায় আসে, তাহলে এই দেশের অস্তিত্ব থাকবে না। “আমি বারবার করে বলছি যে, এই সরকার ‘স্বাধীনতার বিরুদ্ধে’ অবস্থান নিয়েছে, জাতির অস্তিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।” সরকার জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, ‘সমগ্র জাতির মধ্যে হানাহানি এমন পর্যায় নিয়ে গেছে যে, এখান থেকে ফিরে আসা অসম্ভব।’ সরকার বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ফেলেছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, “আজকের পত্রিকায় দেখলাম এর মধ্যে তারা নতুন করে পাঁচ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দিচ্ছে, দেখলাম প্রায় এক হাজার ৮০০ সাব ইন্সপেক্টর নিয়োগ দিচ্ছে। নির্বাচনের ঠিক আগে আগে এবং সেখানে উল্লেখও করা হচ্ছে ‘স্বাধীনতার পক্ষের ব্যক্তিদের’Ñআসলে সেখানে আওয়ামী পক্ষের লোকদের সেখানে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।”
‘সরকারের কত বড় দাম্ভিকতা!’
দেশে-বিদেশে সমালোচনা সত্ত্বেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না করে সংশোধনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “কত বড় দাম্ভিকতা আপনাদের! স্পষ্ট করে সব মানুষ যখন বলছে যে, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করুন,’ তখন আপনারা বলছেন, এটা বাতিল হবে না। কেন হবে না? আপনাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য ওটা (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) একটা হাতিয়ার হিসেবে আপনারা ব্যবহার করছেন, অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সুতরাং সেই অস্ত্রকে আপনারা বাদ দিতে চান না।”
এদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছেÑএ বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “মানুষ তারা আজকে সংগ্রাম শুরু করেছে, লড়াই শুরু করেছে। এই লড়াইয়ে অবশ্যই গণতন্ত্রের বিজয় হবে এবং এই ভয়াবহ ‘দানবীয় ফ্যাসিবাদ’ পরাজিত হবে।”