আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে খিচুড়ি বিতরণ বিএনপি কার্যালয়ে তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয়ে দেখা গেল বিপরীত চিত্র। ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, নেতা-কর্মীদের ভিড়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুখর। সেখানে দুপুরে খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয় আগের মতো গতকালও ছিল তালাবদ্ধ। সেখানে কোনো নেতা-কর্মী নেই, রয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতি। নেতারা বলছেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপির কোনো কার্যালয়ে কেউ যাচ্ছেন না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। তফসিলে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ নভেম্বর। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, তারা আজ শুক্রবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করবে।

বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর আগামী রোববার ও সোমবার সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডেকেছে। সাধারণত বিএনপি ও তার মিত্ররা একই কর্মসূচি দেয়।

বিএনপির অবরোধে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ‘শান্তি সমাবেশের’ কথা বলে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও নেতা-কর্মীরা থাকেন।

বেলা ১টায় গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমদ মনাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ নগরের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান কর্মসূচিতে দেখা যায়।

কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের জন্য খাবারের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। একটি ‘পিকআপ ভ্যানে’ বড় বড় পাতিলে করে খিচুড়ি আনা হয়েছে। সারিতে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের থালায় খাবার নিচ্ছেন নেতা-কর্মীরা।

নেতা-কর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে খাবার গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক আলিম বেপারী। তিনি বলছিলেন, পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে, কেউ হুড়োহুড়ি করবেন না।

ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর সহিংসতা শুরুর পর বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশের অভিযানে পণ্ড হয়ে যায়। পরদিন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হন দলের কেন্দ্রীয়, জেলা ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অনেকে। প্রায় সব নেতা এখন আত্মগোপনে।

মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। ২৯ অক্টোবর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট কার্যালয়ের সামনে ‘ডু নট ক্রসÑক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ টেপ দিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের ফটকের তিন দিক ঘিরে আলামত সংগ্রহ করে।

দুই দিন পর কার্যালয়ের দুপাশে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। মঙ্গলবার দুপাশের কাঁটাতারের ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়া হয়। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, গ্রেপ্তার আতঙ্কে কার্যালয়ে কেউ যাচ্ছেন না।

গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় নয়াপল্টনে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপি কার্যালয়ের মূল ফটকে এখনো তালা ঝুলছে। কার্যালয়ের সামনের সড়কে সতর্ক অবস্থান নিয়ে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘোরাঘুরি করছেন।

২৮ অক্টোবরের পর আলোচনায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে দেয়া নির্বাচন কমিশনের চিঠি ফটকের ভেতরের অংশের একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে আরও কিছু চিঠি ছিল।

সামনের সড়কে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, বিএনপির কার্যালয়ের সামনে কোনো যানবাহনকে দাঁড়াতে দিচ্ছে না পুলিশ।

বিএনপির কার্যালয় লাগোয়া হোটেল ভিক্টোরির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল আহাদ বলেন, কার্যালয়ে বিএনপির কেউ আসেন না। ২৮ অক্টোবরের আগে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকতেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০