নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল দিতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তিনি বলেন, তারা তো চানই বিরোধী দল নির্বাচনে না আসুক। ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে তো তাদের। ওয়াক ওভার, আমরা বলেছি যে, এ ধরনের ইলেকশন জনগণ মানবে না। ‘একেবারে সবাইকে লোকমা তুলে খাওয়ায় দিতে হবে, জিতিয়ে দিতে হবে, তবেই আসব এটা তো হতে পারে না,’Ñনির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা তো একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা তো নির্বাচন করতেই চাই, কিন্তু সেই নির্বাচনটা তো হতে হবে নির্বাচনের মতো। ওটা তো তামাশা হওয়ার জন্য হবে না। যারা ভোটের আগের রাতে ভোট করে ফেলে, ভোট নিয়ে চলে গেল, ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করে দিলÑনির্বাচন হয়ে গেল, প্রার্থীরা কেউ ক্যাম্পেইনে নামতে পারবে না, তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হবে। দেশে একটা ভয়-ভীতি, ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হবে, এটা তো হতে পারে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দল তার মতামত বলবে, শেখ হাসিনাও তার বক্তব্য বলবেন। এভাবেই তিনি টিকে আছেন জনগণকে প্রতারণা করে, মিথ্যা কথা বলে, ভয় দেখিয়েÑসবকিছু করে টিকে আছেন।
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ‘ভয়ে আছে’ বলে মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, আমাদের ভয় পাওয়ার প্রশ্ন নেই, বরং তারা ভীত হয়ে আছেন। তারা সন্ত্রস্ত আছেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে নাÑএটাই হচ্ছে মূলকথা, যে কারণে তারা আজকে বিভিন্ন কলাকৌশল করে, বিভিন্ন রকম প্রতারণা করে, জনগণকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করে দিয়েছে ভোট দেয়া থেকে। মানুষই তো ভোট দিতে যায় না এখন। ভোট কী? পিপলস উইল ভোট। ওরাই (জনগণ) তো যেতে পারে ভোটকেন্দ্রে। সেই জিনিসটা বড় কথা।
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আওয়ামী লীগ প্রহসন করছে বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই নির্বাচন একটা প্রহসন, একটা খেলা। আপনারা দেখবেন, অধ্যাপক আলী রিয়াজের যে ‘হাইব্রিড ডেমোক্রেসি’ বইটা আছে, সেটার মধ্যে পরিষ্কার বলা আছে, এসব দেশে কর্তৃত্ববাদী যেখানে শেকড় গেড়ে বসে, সেখানে নির্বাচনটা তাদের অন্যতম অস্ত্র। সেই অস্ত্রটা কী? তারা দেখায় যে, আমরা একটা নির্বাচন করেছি। উই আর ইলেক্টেড গভর্মেন্ট, বাট দেয়ার ইজ নো ইলেকশন আসলে কোনো ইলেকশন হবে না। পৃথিবীর অনেক দেশ আছে এভাবে তারা নির্বাচন করে, এভাবে তারা টিকে থাকার চেষ্টা করে।’
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের ‘সুযোগ নেই’ বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, আমরা সংলাপ করছি তাদের সঙ্গে যারা এই সরকারকে মানে না, যারা মনে করে যে, এই সরকার দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছেÑতাদের সঙ্গে আমরা সংলাপ করছি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের কোনো সুযোগ নেই, প্রশ্নই ওঠে না। দে মাস্ট লিভ, তাদের চলে যেতে হবে। আমরা বারবার করে বলছি যে, চলে গিয়ে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজ করবে।
নির্বাচন নিয়ে সরকার আলোচনায় ডাকলে যাবেন কি নাÑএমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো আলোচনার সুযোগ নেই, কোনো আলোচনা হবে না। ‘যুগপৎ আন্দোলন’ কবে নাগাদ শুরু হতে পারেÑজানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছি। সময়টা এখনই বলা যাবে না। সেই সংলাপ যখনই শেষ হবে, তখন বলতে পারব।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী ও আইন-বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।