নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির প্রতিপক্ষ এখন আর আওয়ামী লীগ নয়, প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশ প্রশাসন এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচন কমিশন ক্ষসতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, প্রতিটি নির্বাচনে প্রশাসনকে পুরোপুরি ব্যবহার করা হচ্ছে।
গতকাল দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক হুইপ সৈয়দপুরের নেতা শওকত চৌধুরীর বিএনপিতে যোগদান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এ নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ কোনো সংগঠন নয়। প্রতিষ্ঠানটি এখন সরকারের, আওয়ামী লীগের একটা লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত তারা তাদের একটা অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা। এটার দায়িত্ব হচ্ছে নিরপেক্ষভাবে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা দেখছি, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। আমরা দাবি করেছি যে, নির্বাচন কমিশনের এ মুহূর্তে পদত্যাগ করা দরকার, এ সরকারের এ মুহূর্তে পদত্যাগ করা দরকার, এ জন্য যে তারা সংবিধানকে লঙ্ঘন করে জনগণের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে এবং বিনা ভোটের একটা বেআইনি সরকার তারা হয়ে আছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশন কেএম নূরুল হুদার নির্বাচন কমিশন পরিচালনার কোনো যোগ্যতা নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। চসিক নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ নির্বাচনে যা হয়েছে, তা আপনারা পত্রপত্রিকায় দেখেছেন। একেবারে রক্তাক্ত, মানুষ মারা গেছে দুজন। বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রে থাকতে দেয়া হয়নি, তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বের করে দেয়া হয়েছে।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল, বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিশ্বাস করে। অর্থাৎ বিএনপি কখনও ভিন্ন পথে বন্দুক-পিস্তল দিয়ে জোর করে অথবা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করে না। বিএনপি জনগণের সমর্থনের মধ্য দিয়েই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। সে জন্য তারা সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে বলেন, এই নির্বাচন করার কী যুক্তি আছে? আমরা বলি, এ নির্বাচন করাটা গণতান্ত্রিক সংগ্রামের একটা অংশ হিসেবে নিয়েছি।
নির্বাচনে আমাদের নেতাকর্মী-সমর্থকদের সম্পৃক্ত করতে পারি এবং জনগণের কাছে যেতে পারি। যেটা অন্য সময় যাওয়াটা কঠিন ব্যাপার। যেতেই দেয় না, মুভ করতে দেয় না। সভা-সমিতি-মিটিং করতে দেয় না। যেটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ন্যূনতম অধিকার মানুষের জন্য, সেই ডেমোক্র্যাটিক স্পেসটা তারা নিয়ে নিয়েছে। সেই কারণে আমরা নির্বাচনে অংশ নিই।’
নতুন যোগদানকারী নেতা শওকত চৌধুরীকে বরণ করে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শওকত চৌধুরী সাহেবকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি আশা করি, যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে, সৈয়দপুরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি নেতৃত্ব দেবেন।’
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে বিএনপিতে যোগ দিচ্ছে আরও অনেকে। বিএনপি হচ্ছে একমাত্র দল যারা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে পারে, যারা দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে। অতীতে বিএনপি গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে, আগামীতেও ফিরিয়ে আনবে।
আগামী দিনগুলোতে বিএনপির নেতৃত্বে ইনশাআল্লাহ সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যে গণঐক্য তৈরি হবে, সব মানুষের যে গণঐক্য তৈরি হবে, সেই গণঐক্যের মাধ্যমে যে জোয়ার সৃষ্টি হবে, সেই উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’
যোগদানকারী নেতা শওকত চৌধুরী বলেন, ‘জাতীয়তাবাদকে উদ্ধার করার সময় এখন। এখন দেশে দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। দুটিই গণতান্ত্রিক দল। আজকে আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্রটাকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বা চালাচ্ছে, সেটা হলো প্রশাসনিক গণতন্ত্র। জনগণের গণতন্ত্র তাদের মধ্যে নেই। জনগণের গণতন্ত্র রয়েছে বিএনপিতে। জনগণের গণতন্ত্রের জন্য তারা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করছে। এ যোগদানের মাধ্যমে আমি সেই সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলাম।’
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিবের সভাপতিত্বে এ আলোচনায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, সৈয়দপুর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল গফুর সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ, সৈয়দপুর বিএনপির সদস্যস চিব শাহীন আখতার, রংপরের জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের রিয়াজ উদ্দিন, শায়রুল কবির খানসহ সৈয়দপুরের স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।