আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে

জেসমিন আক্তার: প্রতি বছর মৌসুমি ঋতুতে বাংলাদেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভ‚-ভাগ বন্যা প্লাবিত হয়। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, ভূ‚-কাঠামো, ভূ‚-প্রকৃতি এবং ভূ‚মিরূপ বন্যা সংঘটনের জন্য দায়ী। সাধারণত মে মাস থেকেই এদেশে বন্যা শুরু হয়ে থাকে। সম্প্রতি আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট জেলায়। ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আর ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

গণমাধ্যম খবর থেকে জানা যায়, ৮ দিন ধরে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশিরভাগ উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারার বাঁধ ভেঙে ভেসেছে কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জনপদ।

সিলেট শহরের লোকালয়ে ঢুকেছে বন্যার পানি। ফলে মহানগরী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। পানিবন্দি হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। প্রতিদিনই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই এমন আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে মাঠভরা পাকা ধান। সারা বছরের খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকেরা।

কোথাও ধানের বীজতলা ডুবেছে, কোথাও পুকুর। মানুষ পানিবন্দি হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে খাবার পানি ও পশুখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী সিলেট বিভাগের সবগুলো নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা, কুশিয়ারা ও সারিগোয়াইনের পানি উপচে পড়ছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে গত ১২ মে থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে টানা বৃষ্টিপাতে কারণে নদীগুলো ফুঁসে উঠেছে।

এতে হাওর, নদী পেরিয়ে কিংবা কোথাও বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও সিলেট সদর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি। কানাইঘাট পৌরসভা এলাকা সম্পূর্ণ প্লাবিত। গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের সঙ্গে জেলার ও অন্যান্য অঞ্চলে বন্যাদুর্গত এলাকায় যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যায় কাজ হারানো নি¤œ আয়ের মানুষ পড়েছেন সবচেয়ে বেকায়দায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। জানা গেছে, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকেই সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। গত রোববার থেকে বৃষ্টি কমে এলেও পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করে। বর্তমানে থেমে থেমে পানি বেড়ে সিলেটের বেশিরভাগ এলাকাই এখন ভাসছে বন্যায়। জেলার ৬টি উপজেলা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পানি উঠে গেছে নগরের বেশিরভাগ এলাকায়ও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে ১২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে সিলেটেও। ফলে দ্রæত বাড়ছে নদ-নদীর পানি। পানির তোড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে ২০টি নদীরক্ষা বাঁধ। এ ছাড়া কুশিয়ারা, সারি ও গোয়াইন নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি এত বেশি আসছে যে, বাঁধগুলো উপচে পড়ছে। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি মিনিটেই বাড়ছে পানি। নগরের অন্তত ৬০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে এসব এলাকার সড়ক। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি অফিসেও পানি উঠে গেছে। পানির কারণে সড়কজুড়ে ছিল দীর্ঘ যানজট। সিলেট সদর, সুনামগঞ্জ, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা ও জৈন্তাপুর প্রভৃতি উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি। চরম দুর্ভোগের মধ্যে এখন দিন পার করছেন এসব মানুষ। বন্যা কবলিত এসব এলাকার প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সিলেট শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে এখানের বহু পাকা, রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে হাজার ঘরবাড়ি, দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শতাধিক মৎস্য খামার। এ ছাড়া গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ। সময় যত যাচ্ছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির যেন আরও অবনতি হচ্ছে। নগরীসহ জেলার সবগুলো উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। বিভিন্ন সড়ক ডুবে গিয়ে উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার এমনকি সরকারি দপ্তরগুলোতে উঠেছে পানি। বন্যাকবলিত হয়ে পড়া সিলেট নগরীর আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ির জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়েছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে সবখানে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের অব্যাহত বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট বিভাগের সর্বত্রে। বাঁধ ভেঙে অবিরাম পানিতে ডুবছে সিলেটের নতুন নতুন এলাকা। সেজন্য সিলেট নগরীতে ১৬টি বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এদিকে সামগ্রিক প্রেক্ষাপট থেকে বলা যায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ প্রস্তুতির না নিলে ক্ষতি বাড়তে থাকবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বিশেষ করে আমি মনে করি বন্যা উপদ্রæত এলাকা মানুষের প্রধান সমস্যা হলো খাদ্য ও নিরাপদ পানি। আর নানা ধরনের রোগ ব্যাধিতে ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় অসহায় মানুষের পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামতের জন্য দ্রæত ব্যবস্থা নিতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় যত দ্রæত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সবাই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাই প্রত্যাশা

শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ

জয়নাল হাজারী কলেজ, ফেনী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০