আকাশলীনা

আকাশলীনা! হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতার সঙ্গে মিল রেখে এই ইকো ট্যুরিজম সেন্টারের নাম রাখা হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জে সুন্দরবন সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে ২৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। মূলত এটি মুন্সীগঞ্জ ও কলবাড়ী বাজারের মধ্যবর্তী নয়নাভিরাম কেওড়া বাগানে অবস্থিত।

জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধান ও শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিসের আওতায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) গড়ে উঠেছে এই ট্যুরিজম সেন্টারটি। গত বছরের নভেম্বরে এর উদ্বোধন হয়। বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রতি

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ রয়েছে। প্রায় বছরজুড়েই ভ্রমণপিপাসু মানুষরা এখানে বেড়াতে আসে। দর্শনার্থীদের ভ্রমণ আরও আনন্দময় করে তুলতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে এই ইকো ট্যুরিজম সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে।

দর্শনীয় যা কিছু

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আকাশলীনার অন্যতম আকর্ষণ পূর্ণিমার রাতে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য অবলোকন, যা ইকো পর্যটকদের কাছে অন্যতম লোভনীয়। তাছাড়া যারা অল্প সময়ে সুন্দরবন দেখতে চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ জায়গা।

পর্যটন কেন্দ্রের সামনে রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এখানে রয়েছে ট্রেল, জেটি ও নৌভ্রমণের জন্য বোট। রয়েছে বাঁশের পাটাতনে তৈরি সড়কপথ। এ পথ ধরে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে গোলপাতার তৈরি ঘর, কেওড়া গাছ ঘিরে আকর্ষণীয় বসার স্থান ও কেওড়া গাছে ঝুলে থাকা কৃত্রিম বানর। বাঁশের মাচায় ঘাপটি মেরে বসে থাকা কৃত্রিম বাঘও চোখে পড়ে।

আকাশলীনায় আবদুস সামাদ নামে একটি উন্মুক্ত জাদুঘর রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ পর্যটকদের কাছে তুলে ধরছে এ মৎস্য জাদুঘর। এখানে সামুদ্রিক প্রাণী অক্টোপাস, রুপালি হরিণা চিংড়ি, কাঁকড়া, কাইন, ভাঙন মাছ থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চলের শতাধিক মাছ ফরমালিনে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।

আকাশলীনার সামনে খোলপেটুয়া নদীর ওপর বাঁশের পাটাতন দিয়ে তৈরি বেশ কিছু চমৎকার টংঘর রয়েছে। টংঘরগুলোর নামও বেশ চমৎকার। কোনোটির নাম প্রাণজুড়ানি প্রকৃতি, কোনোটির নাম মনজুড়ানি। এখানে বসে দর্শনার্থী আড্ডা দেওয়ার পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। সঙ্গত কারণে স্বল্পসময়ে দর্শনার্থীর কাছে বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে এই ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। এখানে একটি রেস্টুরেন্ট, পার্কিং স্থানসহ পর্যটকদের জন্য নানা ধরনের সুবিধা রয়েছে।

কোথায় থাকবেন

দূরদূরান্তের পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে আবাসন ব্যবস্থা। রয়েছে বিলাসবহুল আবাসিক রুম। রুমগুলোর নামও প্রকৃতি থেকে নেওয়া। যেমন বনবিলাস, কেওড়া, সুন্দরী, গোলপাতা, খলিস প্রভৃতি। এখানে খুব আরামে রাতযাপন করতে পারবেন দূরের দর্শনার্থীরা। আকাশলীনায় যাওয়ার আগে যোগাযোগ করে যাওয়া উত্তম।

যাতায়াত ব্যবস্থা

রাজধানী থেকে সহজেই আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজমে যেতে পারবেন। শ্যামলী, গাবতলী থেকে সরাসরি বাসে শ্যামনগর যেতে পারেন। শ্যামনগর থেকে মুন্সীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এ কেন্দ্রটির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। স্থানীয় যানবাহনের পাশাপাশি বাস ও মাইক্রোযোগে যেতে পারেন। সময় লাগতে পারে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। চাইলে যশোর পর্যন্ত বিমানে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে যশোর থেকে আবার বাস বা মাইক্রোবাসযোগে মুন্সীগঞ্জ যেতে হবে।

হাসানুজ্জামান পিয়াস

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০