Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:23 am

আকিজ, বাবাসহ চার ব্র্যান্ডের দেড় কোটি টাকার জর্দা জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক: তৈরি হচ্ছে আকিজ, বাবাসহ চার ব্র্যান্ডের নকল জর্দা। প্রতিষ্ঠানের নেই ভ্যাট নিবন্ধন। মূলত রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বাজারজাত করতেই তৈরি হচ্ছে এসব জর্দা। চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা সাগর কেমিক্যাল অ্যান্ড কোম্পানি নামের এমন একটি অবৈধ জর্দা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে। সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতভর অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কোটি ৩১ লাখ টাকার জর্দাসহ জর্দা তৈরির সব মালামাল জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক।

কমিশনার বলেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব ফাঁকি দিতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল জর্দা, গুল তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল চন্দপুরা মাজারগলি দেওয়ানবাজার এলাকার একটি কারখানায় নকল জর্দা তৈরি করা হচ্ছে বলে গোপন সংবাদ পাওয়া যায়। এরই প্রেক্ষিতে সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতে আগ্রাবাদ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা উপ-কমিশনার শাহীনূর কবির পাভেল এর নেতৃত্বে সদর দপ্তর প্রিভেন্টিভ টিম ও কোতয়ালী সার্কেলের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সাগর কেমিক্যাল অ্যান্ড কোং নামের একটি ভ্যাট নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানের জর্দা তৈরির মেশিনসহ সব মালামাল জব্দ করা হয়।

যার মধ্যে রয়েছে-বিভিন্ন ব্রান্ডের নকল ও অবৈধ প্রায় ১২ হাজার কৌটা, তিন হাজার ৮৪০ প্যাকেট জর্দা, ৭২ বস্তা জর্দা তৈরির উপকরণ, ৪৬ বস্তা খালি কৌটা, দুইটি কৌটাজাত করার মেশিন, একটি প্যাকেজিং মেশিনসহ জর্দা তৈরি ও মোড়কজাত করার বিভিন্ন উপকরণ। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে আকিজ, বাবাসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্রান্ডের নকল জর্দা উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে। জব্দকৃত পণ্যের রাজস্ব ফাঁকির পরিমান আনুমানিক এক কোটি ৩১ লাখ টাকা।

কমিশনার আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়াই গত ছয়মাস ধরে জর্দা তৈরি ও বাজারজাত করে আসছে। সেজন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ অনুযায়ী মামলা দায়েরসহ আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া এরূপ অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে নিবারনী তৎপরতা চলামান থাকবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট নিবন্ধিত না হওয়ায় মালিকের নাম জানা যায়নি। তাছাড়া অভিযান চলাকালে কিছু মহিলা শ্রমিক ছাড়া মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক কারা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে আশপাশের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি ওই এলাকায় গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অবৈধ জর্দা উৎপাদন করে আসছে।’

উপ-কমিশনার শাহীনূর কবির পাবেল বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি একেবারে অত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। রাজস্ব ফাঁকি দিতে অসাধু ব্যবসায়ীরা অঞ্চলটি বেছে নিয়েছে। ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে জর্দা উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে।’

উল্লেখ্য, এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ টিম প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার জর্দা আটক করে। মিরসরাই উপজেলার হিঙ্গুলীর আবছার ট্রেডার্সের একটি গুদামে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এসব জর্দা আটক করা হয়। অভিযানে ২৫৮ কার্টন ঢাকার কাউছ কেমিক্যাল ওয়ার্কসের তৈরি ‘হাকীমপুরী’ জর্দা আটক করা হয়।

যার মধ্যে রয়েছে-৫০ গ্রামের ২১৬ কৌটার ১০০ কার্টন এবং ২৭৬ কৌটার ১৫৮ কার্টন। যার মোট ওজন ৩ হাজার ২৬০ দশমিক ৪০ কেজি। এসব জর্দার ক্রয়মূল্য ৯৭ লাখ ৮১ হাজার ২০০ টাকা। এর সঙ্গে ভ্যাট হিসেবে ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫০ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে এক কোটি ৮৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৫০ টাকা। মোট রাজস্ব প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানের মালিককে আটক করা যায়নি। পরে মামলা ও জর্দা জব্দ করা হয়।

###