নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে আনুষ্ঠনিকভাবে চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তাতে দেখা যায়, আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে তা কিছুটা কমে সেপ্টেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে। গত ১১ বছর ৩ মাসের মধ্যে আগস্টের এ মূল্যস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সাধারণত কোনো মাসের মূল্যস্ফীতির হিসাব পরবর্তী মাসের ২০ তারিখের মধ্যে প্রকাশ করে বিবিএস। কিন্তু প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখের মধ্যে প্রকাশ করা হয়নি। অবশেষে গতকাল দুই মাসের মূল্যস্ফীতি একসঙ্গে প্রকাশ করা হলো। যদিও গত ৬ অক্টোবর পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আগস্ট
ও সেপ্টেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। চলতি অক্টোবর ও আগামী মাস থেকে মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে আশা করছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি কমাতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি ঋণ হ্রাসসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ভালোভাবে কাজ করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে জুলাই মাসের তুলনায়, তবে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই সমানের দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতি আরও কমবে বলে আশাবাদী আমরা।’
একনেক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সার্বিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে এখন মূল্যস্ফীতি কমতির দিকে। সামনে তা আরও কমবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন বাজারে চালের দাম কমছে। দেশের মানুষ না খেয়ে নেই। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। খুব বড় দুর্ঘটনা না ঘটলে আশা করি আমাদের মূল্যস্ফীতি সামনের দিনগুলোয় আরও কমবে।’
বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৩৬ শতাংশে, যা তার আগের মাসে অর্থাৎ আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বর মাসে শহরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এছাড়া গ্রামে আগস্ট মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ১৩ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘বিশ্বে অন্যান্য বড় অর্থনীতির দেশও মূল্যস্ফীতির শিকার। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশ হতে পারে বলেও আগাম ধারণা দেয়া হয়েছে ওই দেশে। সে তুলনায় আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন পর্যন্ত খুব সন্তোষজনক। আশা রাখি, সামনের দিনে পরিস্থিতির আরও উন্নত হবে।