আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯-এর সংক্রমণ এড়াতে বিকাশ ও রকেটের মতো সেবার ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। পোশাক শ্রমিকদের বেতন, সরকারি ভাতাসহ বিভিন্ন সেবায় তাৎক্ষণিক লেনদেনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং। ফলে এ সেবায় সক্রিয় হিসাব, গ্রাহক সবই বাড়ছে। তবে কমে গেছে লেনদেনের পরিমাণ। জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে লেনদেন কমেছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) আগস্টের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এমএফএস তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকরা ৬২ হাজার ২৩০ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় দুই হাজার সাত কোটি টাকা। তার আগের মাস জুলাইয়ে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল দুই হাজার ১৪২ কোটি টাকা। ওই মাসে মোট লেনদেন হয়েছিল ৬৬ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। তবে ডাক বিভাগের সেবা নগদের তথ্য এ হিসাবে আসেনি। নগদের তথ্য যোগ হলে লেনদেন মোট লেনদেন ২০ হাজার থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে। দৈনিক লেনদেন বাড়বে ৭৫০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগে গ্রাহকের কাছে মোবাইলের লেনদেন আরও জনপ্রিয় করতে বিশেষ ছাড় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষ সরাসরি সাক্ষাতে নগদ লেনদেনের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশলেস লেনদেনে বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পাশাপাশি শ্রমিকদের বেতন-বোনাস, সরকারের সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেয়া হয়। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেনাকাটায় লেনদেন ব্যাপকহারে বেড়েছে। সব মিলিয়ে জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছিল। পরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পাশাপাশি ঈদ-পরবর্তী মানুষের কেনাকাটা স্বাভাবিকভাবে কমে যায়। ঈদের পরের মাসে সরকারি বিভিন্ন পেমেন্টও তেমন হয়নি, একই সঙ্গে মোবাইলে রেমিট্যান্স প্রবাহও কম ছিল। সব মিলিয়ে জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে কম হয়েছে। তবে লেনদেন কমলেও আগের মাসের চেয়ে আগস্টে গ্রাহক ও এজেন্টসংখ্যা বেড়েছে।

জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, সব সময় ঈদের মাসে মোবাইল ফাইন্যান্সের লেনদেন বাড়ে। এছাড়া করোনার বিস্তার রোধে অনেকে গ্রামে না গিয়ে সহজে প্রিয়জনদের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা বেড়েছিল। ঈদের পরের মাস আগস্টে স্বাভাবিকভাবে এসব কার্যক্রম কম হয়েছে, যার কারণে লেনদেন কমেছে বলে তিনি জানান।

বর্তমানে ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। গত আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার টাকা জমা পড়ে (ক্যাশ ইন) ১৮ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা এবং উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়েছে ১৪ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে ব্যক্তির হিসাব থেকে আরেক ব্যক্তির হিসাবে পাঠানো হয় ১৯ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।

গত আগস্টে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে কেনাকাটার বিলও পরিশোধ হয়েছে তিন হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এছাড়া গত আগস্টে সামাজিক নিরাপত্তার ভাতা বিতরণের পরিমাণ কমে ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা হয়েছে। এক হাজার ৯০৩ কোটি টাকা কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান, ৬৮৮ কোটি টাকা মোবাইল ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ বাবদ এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট শেষে এমএফএস সেবায় ১১ লাখ ৬২ হাজার এজেন্ট যুক্ত রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায়। নিবন্ধিত গ্রাহক ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে তিন থেকে চার কোটি হিসাবে প্রতিমাসে নিয়মিত লেনদেন হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০