আগস্টে রেমিট্যান্স কমেছে সাড়ে ২১ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে চলতি বছরের আগস্টে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমেছে। গত মাসে দেশে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। গত বছরের আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০৪ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম বেঁধে দেয়ায় প্রবাসী আয়ে টান পড়েছে। কারণ হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠালে এখন ডলারের দাম ব্যাংকের তুলনায় বেশি পাওয়া যায়। সেখানে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেশি। তাই মানুষ হুন্ডিতে প্রবাসী আয় পাঠাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৭ কোটি ডলার। আগস্টে তা ১৬০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। জুলাইয়ের সঙ্গে তুলনা করলে আগস্টে প্রবাসী আয় কমেছে ৩৭ কোটি ডলার বা প্রায় ১৯ শতাংশ। আর গত বছরের আগস্টের তুলনায় গত আগস্টে প্রবাসী আয় কমেছে ৪৪ কোটি ডলার। আগস্টের প্রবাসী আয় গত ছয় মাসের সর্বনি¤œ। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে।

এমন একসময়ে দেশে প্রবাসী আয় কমছে, যখন দেশে ডলার-সংকট প্রকট। ডলার আয়ের অন্যতম একটি উৎস প্রবাসী আয়। ডলার-সংকট কাটাতে প্রবাসী আয় বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও খুব বেশি সুফল দেখা যাচ্ছে না।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) মিলে রপ্তানি, প্রবাসী আয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। নতুন এ দর গতকাল রোববার থেকে কার্যকর হয়। এর আগে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম ছিল ১০৯ টাকা। সেই হিসাবে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম গতকাল থেকে ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে হঠাৎ করে খোলা বাজারে (কার্ব মার্কেট) বেড়ে গেছে ডলারের দাম। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ডলার প্রতি দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। এখন এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। বিষয়টি নজরে আসার পর মাঠে নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বেশি দামে ডলার বিক্রির অপরাধে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত ও সিলগালা করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভয়-আতঙ্কে ডলার বেচাকেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে খোলা বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। একই দিন গুলশান-বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়েও এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় মানি চেঞ্জারগুলোয় গিয়ে দেখা যায়, কর্মীরা অলস বসে আছেন। বেচাকেনার কোনো কার্যক্রম নেই। যারা ডলার কেনার জন্য আসছেন, তাদের বলে দিচ্ছেন ডলার নেই।

খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, এ ব্যবধান অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসা আরও কমে যেতে পারে। বিপরীতে হুন্ডির প্রতি আগ্রহ বাড়বে প্রবাসীদের। কারণ ডলারের দাম যেখানে বেশি পাওয়া যাবে, প্রবাসীরা সেদিকেই ঝুঁকবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০