নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বৈধ পথে হু-হু করে রেমিট্যান্স বাড়ছে। গত আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলার, যা তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ব্যাংকাররা বলছেন, বিদায়ী সরকারের ওপর অনেকটাই বিরক্ত হয়ে এপ্রিলে রেমিট্যান্স শাটডাউন ঘোষণা করেন প্রবাসীরা। এ কারণে ওই মাসে রেমিট্যান্স কমে যায়। তবে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের পর থেকে এর প্রবাহ বাড়ছে। এ ছাড়া বর্তমানে পাচারকারীরা সবাই চাপে থাকায় হুন্ডি অনেকটাই কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্টজুড়ে দেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬২ কোটি ডলার বেশি। গত বছরের আগস্টে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলার। চলতি বছরের জুলাইয়ে এসেছে ১৯১ কোটি ডলার। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩১ কোটি ডলার।
তথ্য বলছে, মাসের প্রথম পাঁচ দিনে ১২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলেও মাস শেষে তা দুই বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ মাসের প্রথম পাঁচ দিন গড়ে দিনপ্রতি রেমিট্যান্স আসে দুই কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে মাস শেষে প্রতিদিনে গড়ে সাত কোটি ১৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এপ্রিল থেকে টানা তিন মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এলেও জুলাইয়ে তা কমে দুই বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে। এখন প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। তাদের সচেতন করা হচ্ছে। আগামীতে বৈধ পথে আরও বেশি প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্টে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক, এসেছে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দ্বিতীয় ট্রাস্ট ব্যাংক, সংগ্রহ করেছে ২৯ কোটি ডলার। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংক ২০ কোটি ৬০ লাখ। চতুর্থ জনতা ব্যাংক ১৫ কোটি ৫৮ লাখ। পঞ্চম মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সংগ্রহ করেছে ১০ কোটি ৬৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। আগস্টে আটটি ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারেনি। ব্যাংকগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), কমিউনিটি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বিদেশি হাবিব ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এ ছাড়া এক কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী ব্যাংকের সংখ্যা ২২। ব্যাংকগুলো হচ্ছে বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ইউসিবি ও উত্তরা ব্যাংক। এর বাইরে বিদেশি কোনো ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহে কোটি টাকার ফিগার ছুঁতে পারেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে। গত জুনে এসেছিল ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ, মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ এবং জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা।
অন্যদিকে গত ৩১ জুলাই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (বিপিএম৬) অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২১ আগস্টেও তা একই অবস্থায় থাকে। তবে ২৮ আগস্ট তা কিছুটা বেড়ে ২০ দশমিক ৫৯ বিলিয়নে দাঁড়ায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ২৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর রিজার্ভ নিয়ে আশা প্রকাশ করে গত বুধবার জানিয়েছেন, দেশের রিজার্ভ এখন কমবে না।