বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

আগামী অর্থবছর প্রবৃদ্ধি হবে ৫.১ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে পাঁচ দশমিক এক শতাংশ। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব বাড়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

গতকাল সারাবিশ্বে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস: জুন ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে টিকাদান তুলনামূলক অনেক কম হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি তিন দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। যদিও বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ছয় দশমিক এক শতাংশ। আগামী অর্থবছরে (২০২১-২২) জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। যদিও বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

প্রবৃদ্ধি নিয়ে এর আগে বাংলাদেশের জন্য গত মার্চে একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এরপর করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় লকডাউন তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত করা হয়। এরপরও আগের পূর্বাভাস বহাল রেখেছে বিশ্বব্যাংক।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের টিকা ব্যবস্থাপনার তথ্যও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা করা হয়, করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে করোনার প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নির্মাণ খাত। এখনও খুচরা ও পাইকারি পণ্য বিক্রয়, ট্রেডিং, হোটেল-রেস্তোরাঁর আয় স্বাভাবিক হয়নি।

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে বলা হয়, করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশটিতে টিকাদানের আওতায় এখনও যথেষ্ট সংখ্যককে আনা হয়নি। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এখন পুরোটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

করোনার বর্তমান প্রভাব সম্পর্কে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ঋণ বেড়ে যাবে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঘটতে এবং দেশের আর্থিক খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। নতুন করে টিকা দানে অনিশ্চয়তা, টিকার রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা, অপ্রতুল কাঁচামাল, অপর্যাপ্ত আর্থিক উপকরণ ও করোনা মহামারিকে যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছে বিস্তার করতে।

এছাড়া বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বেশকিছু সমস্যা তৈরি করবে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। যদিও বিশেষ কিছু ছাড় সুবিধার কারণে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ততোটা বাড়বে না। কিন্তু এতে করে ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা ও মুনাফা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঋণ মান নিচের দিকে যাবে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে প্রান্তিক আয়ের মানুষ সংকটে পড়বে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কৃষি উপকরণের দর বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছর শেষে শতাংশ হিসেবে মূল্যবৃদ্ধি দুই অঙ্ক তথা ১০ শতাংশের ঘরে উঠবে। ১০ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতিতে ভোগ কমিয়ে দিতে বাধ্য হবে সিংহভাগ মানুষ। খরচের তুলনায় আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় ব্যয় কমিয়ে দেয়ার নীতিতে অনুসরণ করবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, একজন মানুষ তাদের আয়ের ৪৪ শতাংশই খাদ্যের পেছনে ব্যয় করেন।

বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনা মহামারি পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকার কী ধরনের নীতি গ্রহণ করে, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে হলে ৪৪ থেকে ১৮৮ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশের প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে বর্তমান করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচির গতিপ্রকৃতি, চলাচলে নতুন নিষেধাজ্ঞা, কত দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হবে তার ওপর।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০