Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:11 am

আগামী দিনে জাতীয় সরকার গঠিত হবে: আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘রাজপথেই ফয়সালা হবে ৷ আর আগামী দিনে জাতীয় সরকার গঠিত হবে।’

আজ রোববার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এনডিএম পরিচালিত গবেষণাধর্মী সংস্থা গভর্নেন্স অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ (জিপিআর) আয়োজিত ‘গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার, কাঠামোগত সংস্কার এবং প্রধান অংশীজনদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে—এটা যারা ভাবছে, তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে। তাই রাজপথেই ফয়সালা হবে। আগামী দিনে জাতীয় সরকার গঠিত হবে। কারণ দেশের যা অবস্থা, সেখান থেকে তুলে যদি দেশকে একটা রাস্তায় আনতে হয়, তাহলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

আমীর খসরু বলেন, ‘আদালত জামিন দেবেন না, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে না, ব্যাংকগুলো লুটপাটের জন্য কাউকে দায়ী করবে না, কারণ আমরা একটা ফ্যাসিস্ট রেজিমের অধীনে আছি। এখানে আইনের শাসন প্রত্যাশা করলে কোনো লাভ হবে না।’

নির্বাচন কমিশন ভোট চুরি প্রকল্পের অংশ জানিয়ে আমীর খসরু আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের একটা অংশ। তাঁকে বসানোই হয়েছে একটা কারচুপির নির্বাচন করার জন্য ৷ এঁদের কিছু বলে কোনো লাভ নেই। একটাই উপায় আছে, এই রেজিমকে সরাতে হবে।’

বিচারকেরাও এই প্রক্রিয়ার অংশ জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘হিটলারের সময় আইন ছিল, যদি নাৎসি পার্টির সঙ্গে আইনের কোনো সংঘর্ষ হয়, তাহলে নাৎসি পার্টি প্রাধান্য পাবে। মুসোলিনি, স্ট্যালিনের সময়ও এমনই নীতি ছিল। বাংলাদেশেও এখন এমন। অনেকে ১০ বছরেও জামিন পাচ্ছে না। এর সঙ্গে আইনের কোনো সম্পর্ক নেই। বিচারকেরা মাস্টারের আনুগত্য প্রদর্শন করছে মাত্র।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের অধিকার আওয়ামী লীগের নেই, জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে হয়েছিল। এটা বাতিল করতে হলেও সবার ঐকমত্যে বাতিল করতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এককভাবে এটা বাতিল করল। এটা অবৈধ কাজ, এটা বাতিল করার তার অধিকার নাই।’

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যাওয়ার পর যে রাজনীতি আসবে, তা ভিন্ন রাজনীতি। রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থে মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে। শুধু একজন ফ্যাসিস্টকে বিদায় করার জন্য আমরা আন্দোলন করছি না, একটি জ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের আন্দোলন।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা প্রতারক রাজনৈতিক দল ৷ শেখ মুজিবের ৬ দফার ৫ নম্বর দফায় ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার বন্ধ করতে হবে। সেই পাচার এখনো চলছে। মানুষের আয় ১০০ টাকা বাড়লে জিনিসপত্রের দাম ১ হাজার গুণ বেড়েছে। ১২টা প্রতিষ্ঠান মিলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। পুলিশ, বিচার বিভাগসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে যে, চেহারা না দেখে বক্তব্য শুনলে মনে হবে আওয়ামী লীগের নেতা বক্তব্য দিচ্ছে।’

২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা ২ হাজার ২৭২টি কেন্দ্রে শূন্য ভোট পেয়েছিল জানিয়ে এনডিএমের সভাপতি ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আমরা এখন একটা হাইব্রিড রেজিমে আছি, যেখানে একনায়কতন্ত্রের আড়ালে গণতন্ত্রের নাটক হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের এক মহোৎসব। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ভোটব্যাংক খ্যাত এলাকাগুলোর ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির আয়োজন করে।’

এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘এই রেজিম ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের মাধ্যমে আর শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়, এটা বুঝেই তিনি দেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন। আমি মনে করি, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচন বর্জন করবে।’