বিগত বছরগুলোয় দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে যে দুর্বল বিষয়গুলো ছিল, সেগুলো আগামী পাঁচ বছরে অতিক্রম করতে হবে। গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতিতে যে উন্নয়ন হয়েছে, আগামী পাঁচ বছরে তার চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। কারণ বিগত ১০ বছরে যিনি সরকারপ্রধান ছিলেন, বর্তমানেও তিনি সরকারপ্রধান। কাজেই তাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা উচিত। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ছিলেন এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বাকী খলীলী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ, এফসিএ।
বাকী খলীলী বলেন, নির্বাচনের আগে পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন খারাপ অবস্থানে ছিল। বিশেষ করে ২০১৮ সালে দেশে জাতীয় নির্বাচন ছিল। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ অবস্থানে ছিল। এখন নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং বাজারের স্বাভাবিক ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। এটা থাকবেই, কারণ এটাই পুঁজিবাজারের ধর্ম। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা ফিরে আসছে।
পুঁজিবাজার হচ্ছে ইক্যুইটিনির্ভর। শুধু ইক্যুইটিনির্ভর পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা যাবে না। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন করতে হলে ইক্যুইটির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পণ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে ডেরিভেটিব, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড প্রভৃতি।
জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত সালে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে যে দুর্বল বিষয়গুলো ছিল, সেগুলো সামনের পাঁচ বছরে অতিক্রম করতে হবে। গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতির যে উন্নয়ন হয়েছে, এই পাঁচ বছরে তার চেয়ে বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করি। কারণ বিগত ১০ বছরে যিনি সরকারপ্রধান ছিলেন, তিনিই বর্তমানে সরকারপ্রধান।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। এই মুদ্রানীতি ঘোষণা নিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা একটু বিচলিত থাকে। কারণ মুদ্রানীতি মানি মার্কেট-সর্ম্পকিত। কিন্ত মানি মার্কেটের সঙ্গে পুঁজিবাজার প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এমন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে হবে, যাতে পুঁজিবাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। আবার দেশের অর্থনীতির বেশিরভাগ উন্নয়ন ব্যাংকনির্ভর। অর্থাৎ ব্যাংক স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে। ফলে ব্যাংক খাতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই ফাইন্যান্সিয়াল পদ্ধতিগত কিছু পরিবর্তন করা দরকার। অন্য দেশের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হয় বন্ড এবং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। পুঁজিবাজার হচ্ছে অর্থনীতি উন্নয়নের একটি উৎস। যে দেশের পুঁজিবাজার যত উন্নত, সে দেশ অর্থনীতিতে তত এগিয়ে। বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার যে অবস্থানে রয়েছে, এর চেয়ে আরও উন্নত করতে হবে। তাই পুঁজিবাজারে বন্ড, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ভালো মানের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভারতের ব্যাংক কোম্পানির আইনে কোনো ব্যবসায়ী ব্যাংকের বোর্ড সদস্য হতে পারবে না এবং কোনো শেয়ারহোল্ডার ব্যাংকের বোর্ড সদস্য হতে পারবে না। কিন্তু একজন ব্যবসায়ী শেয়ারহোল্ডার ও স্পন্সর হতে পারবে। অর্থাৎ যারা ওই ব্যাংক বোর্ড সদস্য থাকে, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করে। কিন্তু দেশের ব্যাংক খাতে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ