আগাম ‘টক কুল’ চাষে ঝিনাইদহের রাসেলের বাজিমাত

নয়ন খন্দকার, ঝিনাইদহ: কবিতায় আছে আম পাকে বৈশাখে, কুল পাকে ফাগুনে। কিন্তু এখন পৌষ মাসেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ‘টক কুল’। আর আগাম জাতের এই ‘টক কুল’ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন শিক্ষিত যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তা শেখ রাসেল আহম্মেদ। তার জমিতে উৎপাদিত হওয়া আগাম জাতের টক কুল যাচ্ছে ঢাকাসহ সারা দেশে। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই তিনি কুল বিক্রি শুরু করেন।

রাসেল জানান, নভেম্বর ও  ডিসেম্বর মাস মিলে তিনি প্রায় লাখ টাকার টক কুল বিক্রি করেছেন। প্রথমে তিনি ১৮০ টাকা দরে টক কুল ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাজারে বিক্রি করেন। বর্তমানে তার কুল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত শেখ আবুল কাশেমের ছেলে শেখ রাসেল আহম্মেদ। এবার দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের ‘টক কুল’ আবাদ করেছেন। তিনি জানান, তরমুজ ও পেয়ারা বাগানের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে দু’বিঘা জমিতে ২০০টি আগাম জাতের টক কুল গাছ পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়েছেন। যশোরের চৌগাছা উপজেলার এক চাষির কাছ থেকে ৬৫ টাকা দরে প্রতিটি চারা ক্রয় করেন তিনি। 

তরমুজ বিক্রি করেছেন অনেক আগেই, সঙ্গে বড় হয়ে গেছে পেয়ারা গাছও। আর এরই মধ্যেই নভেম্বর থেকে টক কুল ধরা শুরু হয়। রাসেল বলেন, এক বিঘা জমিতে কুলের চারা, সেচ, সার, কীটনাশক, পরিচর্যাসহ খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর বিঘাপ্রতি জমিতে কুল পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই বিঘা জমিতে খরচ বাদে চার লাখ টাকার বেশি মুনাফা পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

শেখ রাসেল আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে কুল পাওয়া যায়। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুল বিক্রি করা যাবে। ওই সময় যখন টক কুল গাছ কেটে দিবেন তখন বাজারে মূলত মৌসুমি কুল উঠা শুরু হবে। অথচ তিনি নভেম্বর থেকেই টক কুল বিক্রি শুরু করেছেন।’

জানা গেছে, নভেম্বরে প্রথম ক্ষেতে কুল আসে, তখন তিনি বিক্রির জন্য ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ফোন করেন। সেই সময় পাইকার ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে কুলই নেই, জানাবো কীভাবে? তখন তারা আগে কুল পাঠানো পরামর্শ দেন। পরে বেশ কিছু আগাম জাতের টক কুল পাঠালে তারা কেজি প্রতি ১৮০ টাকা দর দিতে চায়। এরপর ১৫০ টাকা এবং সর্বশেষ তিনি ১২০ টাকা কেজি দরে আগাম জাতের টক কুল বিক্রি করছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকার কারওয়ান বাজার, ওয়াজঘাট ও যাত্রাবাড়ীতে কুল পাঠাচ্ছেন।

তিনি জানান, টক কুলে রোগ বালাই কম, লাভও বেশি। বর্তমানে পাইকাররা তার ক্ষেতে এসে কুল নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক কৃষি উদ্যোক্তা ও চাষি আসছেন, আগাম কুল দেখার জন্য। তিনি খুব শিগগির চারা বিক্রিও শুরু করবেন বলে জানান।

বিষয়ে ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, বাউকুলের তুলনায় টক কুল আবাদে খরচ কম, আবার চাহিদাও বেশি। আগাম এ কুল লাগিয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। আমার জানামতে, এ অঞ্চলে রাসেল আহম্মেদসহ আরও চারজন আগাম জাতের টক কুল আবাদ করেছেন। তারা দামও ভালো পাচ্ছেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০