আঙুলের ছাপ নিয়ে ভোটারের বিড়ম্বনা

শেয়ার বিজ ডেস্ক

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককে; স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়েছে। আঙুলের ছাপ না মেলায় বেশ বিড়ম্বনায় পড়েন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহŸায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। পরে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সহায়তায় ভোট দেন তিনি। লালবাগ ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ভোটার আছিয়া বেগম অভিযোগ করেন, তাকে ভোট দিতে দিচ্ছেন না নির্বাচনী কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার ফজলে হক বলেন, তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে না। তাকে একটু পরে আসতে বলেছি। কারণ, সকালে ঠাণ্ডায় অনেক সময় এরকম হয়ে থাকে। উনি ভোট দিতে পারবেন। সকালে উত্তরার আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে যান সিইসি কেএম নূরুল হুদা। দুবার যাচাই করেও আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোটার নম্বর ব্যবহার করা হয়। এ সময় সিইসিকে নিজের স্মার্টকার্ডও বের করতে দেখা যায়।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আবু তালেব বলেন, ইভিএমে ভোট দেওয়ার আগে আঙুলের ছাপ মেলাতে হয়। সিইসি মহোদয় আঙুলের ছাপ দু-তিনবার ট্রাই করেন। পরে ভোটার শনাক্তকরণ করে ইভিএমে ভোট দেন। অনেকেরই এরকম মেলে না। যে অ্যাঙ্গেল থেকে আঙুলের ছাপ দিতে হয়, তা সঠিক না হওয়ায় মেলে না। এ বিষয়ে সিইসির একান্ত সচিব একেএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, কয়েকবার দিলে হয়তো ছাপ মিলত। সময়ক্ষেপণ না করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করেছেন। প্রথমবার না মেলায় জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভোটার পরিচয় তথ্য মনিটরিংয়ে আসে। এরপরই আঙুলের ছাপ মিলেছে এবং ভোটার অথিন্টিকেশন করা হয়। এরপরই ইভিএমে ভোট দেন স্যার। খবর: বিডিনিউজ।

এদিকে রাজধানীর বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে ড. কামাল হোসেন কয়েকবার চেষ্টার পরও আঙুলের ছাপ মেলেনি। প্রতিবার আঙুলের ছাপ দেওয়ার পর মেশিনের স্ক্রিনে লাল রঙে ভাসছিল ‘আবার চেষ্টা করুন’। এ সময় ড. কামাল হোসেনকে একটু রাগান্বিত দেখাচ্ছিল। কোনোভাবেই তার আঙুল ইভিএম মেশিন শনাক্ত করতে না পারায় নিজের পিন নম্বর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করেন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কাউসার-ই-জাহান জানান, কারও আঙুলের ছাপ না মিললে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এরকম এক শতাংশ ভোটারের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় আমার পিন নম্বর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করি। পরে কম্পিউটারের মনিটরে তার যাবতীয় তথ্য ভেসে ওঠে, সেটা সবাই দেখেছেন। এজেন্টরা শনাক্ত করার পর তার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারছেন নাÑএমন অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, তিন-চারটি উপায় আছে। আইডি কার্ড দেখতে পারে, পুরোনো কার্ড দেখতে পারে। নম্বর মেলালে ছবি আসবে, ভোট দিতে পারবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার তারেকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আঙুলের ছাপ মিলছে নাÑএমন ভোটারের সংখ্যা এক শতাংশের বেশি হওয়ায় নতুন করে আরও কয়েক শতাংশ বাড়ানোর জন্য বেশিরভাগ কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করেছেন। আবেদন অনুযায়ী শতাংশের হার বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়।

সকালে গুলশানের মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিতে এসে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের মা নাসরিন আউয়ালকে আধঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ কেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফারজানা শারমিন বলেন, প্যানেলে কানেকশন লুজ ছিল, দু-তিন দফায় চেষ্টা করেছি। পরে আমরা প্যানেল চেঞ্জ করে দিয়েছি। নাসরিন আউয়াল পরে ভোট দিয়েছেন। বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জয়নাল আবেদিন বলেন, সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণের পর একটি বুথে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ব্যালট প্যানেলের সঙ্গে কন্ট্রোল প্যানেলের সংযোগ পাচ্ছিল না। দুটি ভোট দেওয়ার পর ব্যালট প্যানেল ডিসকানেক্ট দেখাচ্ছিল। তবে পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি।

অপরদিকে, ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর নগরের ভোটাররা জানিয়েছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাদের কেউ বলছেন, ইভিএমে ভোট দেওয়া আসলে সোজা। আবার কেউ অভিযোগ করেছেন, ইভিএম যন্ত্রের কারিগরি ত্রæটিও দেখা দিয়েছে। সকালে গুলশানের মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিতে এসে আলিম উদ্দিন বলেন, আমি এই ইভিএম নিয়ে কিছু জানতাম না। ভোটকেন্দ্রে আসার পর সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা আমাকে বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে ভোট দিতে হবে। পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকের পাশে সবুজ বোতাম টিপে ভোট দিলাম। কোনো জটিলতা হয়নি।

বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে হোসনে আরা বলেন, ইভিএমে ভোট হওয়ায় অন্যবারের চেয়ে এবার ভোট সুন্দর হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগে দেখেছিলাম কীভাবে ভোট দিতে হয়। ইভিএমে ভোট দেওয়া সোজা। খালি টেনশন করেছি। আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোটার মিনু রহমান বলেন, ইভিএমে ভোট দেওয়া অনেক সহজ। হাজারীবাগ এলাকার সালেহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি বুঝতে সময় লেগেছে; তবে ব্যালটে সিল মারার মজাটা নেই। রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দিদারুল আলম বলেন, ইভিএমে প্রথম ভোট দিলাম। আসলে আমার ভোটাধিকার প্রয়োগের তাগিদে সকাল সকাল এসে ভোট দিয়েছি। কোনো সমস্যা হয়নি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০