Print Date & Time : 28 June 2025 Saturday 2:00 am

আজকের দিনে

বাংলাদেশের বিশিষ্ট সহিত্যিক, গবেষক ও অনুবাদক গোলাম সামদানী কোরায়শীর জন্মদিন আজ। তার জন্ম ১৯২৯ সালে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কাউরাট গ্রামে। তার বাবার নাম মৌলভী বাবু শেখ আবু আছল মোহাম্মদ আবদুল করিম কোরায়শী এবং মায়ের নাম আলতাফুন্নেসা। তার পূর্বপুরুষের বাড়ি ছিল ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার বীর আহাম্মদপুরে। পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারে, তারপর ঘাটুরকোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁঠালিয়া মিডল ইংলিশ স্কুল, নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ হাই স্কুল ও বীর আহাম্মদপুর হাই স্কুলে। ময়মনসিংহের কাৎলাসেন মাদ্রাসা থেকে ১৯৫০ সালে আলিম পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে অষ্টম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৫২ সালে ফাজিল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় স্থান ও ১৯৫৪ সালে এমএ (কামিল) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৫-৫৬ সালে তিনি নাসিরাবাদ ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (ময়মনসিংহ) থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে বাংলায় ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে বাংলায় (অনার্স) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পঞ্চম এবং ১৯৬০ সালে এমএ পরীক্ষায় বাংলায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। তিনি ১৯৬১ সালে ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান প্রকল্পে বাংলা একাডেমির কাজে তার সহযোগী হন অধ্যাপক কোরায়শী। এ অভিধান প্রকল্পের পাশাপাশি তিনি অনুবাদকর্মেও মনোনিবেশ করেন। ১৯৬৫ সাল থেকে আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি বিভিন্ন ভাষার বহু মৌলিক গ্রন্থ অনুবাদ করেন তিনি। তার অনুবাদিত গ্রন্থগুলো হচ্ছেÑকালিলা ও দিমনা, আইন-আদালতের ভাষা আরবি-ফার্সি শব্দ (মূল ইংরেজি), অশাস্ত্রীয় পুরাণ (মূল সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়), শব্দাদর্শ অধ্যয়ন (মূল মুহম্মদ ওবায়দুল্লাহ), তারিখ-ই-ফিরোজশাহী, তোহফা (মূল ফার্সি) প্রভৃতি। এরকম বহু অনুবাদ ও সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে অনন্য নিদর্শন রেখে গেছেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন অধ্যাপক কোরায়শী। ওই সময় তার সহকর্মী ছিলেন দেশখ্যাত প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার। এ সময়টাতে তাদের দুজনকে ডাকা হতো ‘মণিকাঞ্চন’ হিসেবে। সহকর্মী সম্পর্কে যতীন সরকার এক লেখায় বলেন, তিনি আমার বন্ধু ছিলেন। পরিচয়ের প্রথম দিন থেকেই তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল। সে সূচনাই দিনে দিনে ক্রমপ্রসারমান হয়ে উঠেছিল। ডালপালা বিস্তার করে মহীরুহের রূপ ধারণ করেছিল। সে ছত্রছায়ায় অবস্থান করে আমি ধন্য হয়েছিলাম। জীবদ্দশায় অধ্যাপক কোরায়শী পেয়েছেন কুমারদী মাদ্রাসা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৫০), এমএ কামিল স্বর্ণপদক (১৯৫৪), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৭) ও অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার (১৯৯০)। তিনি ১৯৯১ সালের ১১ অক্টোবর পরলোকগমন করেন। মৃত্যুর দুই যুগেরও বেশি সময় পর ২০১৭ সালে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, গবেষক, অনুবাদক এবং আপাদমস্তক মানবতাবাদী ও মুক্তচিন্তার অধিকারী এ বরেণ্য মানুষটি। [সংগৃহীত]