আজকের দিনে

 

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ভোলার দৌলতখান উপজেলার পশ্চিম হাজীপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ হাফিজ ছিলেন সেনাবাহিনীর হাবিলদার। মোস্তফা কামাল  ১৯৬৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে পালিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে নিয়োগ করা হয় ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, কুমিল্লায়। ১৯৭১ সালের উত্তাল রাজনৈতিক পরিবেশে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোতায়েন করে। ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টার গানশিপ, নেভাল গানবোট ও এফ-৮৬ বিমানযোগে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। গঙ্গাসাগর প্রতিরক্ষা অবস্থানের দরুইন গ্রামে নিয়োজিত আলফা কোম্পানির ২নং প্লাটুনের একজন সেকশন কমান্ডার ছিলেন মোস্তফা কামাল। ১৭ এপ্রিল সকাল থেকে পাকিস্তানি বাহিনী তীব্র গোলাবর্ষণ শুরু করে প্লাটুন পজিশনের ওপর। আক্রমণের খবর পেয়ে মেজর শাফায়াত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে হাবিলদার মুনিরের নেতৃত্বে ডি কোম্পানির ১১ নম্বর প্লাটুন পাঠান। সারাদিন যুদ্ধ চলে। ১৮ এপ্রিল সকালে শত্রুবাহিনী দরুইন গ্রামের কাছে পৌঁছে যায়। দুপুর ১২টায় অবস্থানের পশ্চিম দিক থেকে মূল আক্রমণ শুরু হয়। শত্রুর একটি দল প্রতিরক্ষার পেছন দিক দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিবাহিনী দরুইন গ্রাম থেকে আখাউড়া রেলস্টেশনের দিকে পশ্চাদপসরণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু নিরাপদে সেখান থেকে সরে আসতে হলে তাদের প্রয়োজন ছিল নিরবচ্ছিন্ন কাভারিং ফায়ার। মোস্তফা কামাল সহযোদ্ধাদের জানান যে, তিনি নিজে এই কাভারিং ফায়ার  করবেন এবং সবাইকে পেছনে হটতে নির্দেশ দেন। সহযোদ্ধারা মোস্তফাকেও পশ্চাদপসরণের অনুরোধ করেন। কিন্তু মোস্তফা ছিলেন অবিচল। মোস্তফার গুলিবর্ষণে পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রায় ২০-২৫ জন হতাহত হয় এবং তাদের অগ্রগতি মন্থর হয়ে পড়ে। পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে মোস্তফা কামালের অবস্থানের ওপর মেশিনগান এবং মর্টারের গোলাবর্ষণ করতে থাকে। একপর্যায়ে মোস্তফা কামালের এলএমজির গুলি নিঃশেষ হয়ে যায় এবং তিনি মারাত্মক জখম হন। তখন পাকিস্তানি সৈনিকরা ট্রেঞ্চে এসে তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। দরুইন গ্রামের মানুষ মোস্তফা কামালকে তার শাহাদাতের স্থানের পাশেই সমাহিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করে। [সংগৃহীত]

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০