বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী চিত্রশিল্পীদের একজন পাবলো পিকাসো। তিনি ছিলেন দক্ষ ভাস্কর, মৃৎশিল্পী, পোশাক পরিকল্পক ও মঞ্চসজ্জাশিল্পী। পাবলো রুইজ পিকাসোর জন্ম ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর দক্ষিণ স্পেনের মালাগা শহরে। মা মারিয়া পিকাসো লোপেজ ও বাবা হোসে রুইজ ব্লাসকো। পিকাসোর বাবা ছিলেন চিত্রাঙ্কনের শিক্ষক এবং স্থানীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক। শিশুকালে রং-তুলির পরিবেশে বেড়ে ওঠায় খুব ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে পিকাসোর। বাবা হোসে রুইজ নিজের স্টুডিওতে ছবি আঁকার সব কলাকৌশল শেখাতেন ছেলেকে। মাত্র সাত বছর বয়সে পিকাসো বাবার কাছ থেকে তেলচিত্রে হাতেখড়ি নেন। ৯ বছর বয়সে এঁকে ফেলেন একটা সম্পূর্ণ তেলচিত্র। ১৮৯১ সালে পিকাসো পরিবার চলে যায় স্পেনের আরেক শহর কোরুনায়। সেখানে পিকাসোর বাবা চারুকলা বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ১৮৯৫ সালে আবার তারা চলে যান বার্সেলোনায়। বার্সেলোনার একটি আর্ট স্কুলে পিকাসোর শিল্পশিক্ষা চলতে থাকে। ১৮৯৭ সালে মাদ্রিদের ‘সান ফার্নান্দো রয়াল একাডেমি’তে ভর্তি হন পিকাসো। বিভিন্ন মানুষের ছবি আঁকতে থাকেন মাদ্রিদ শহরের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে। প্যারিস তখনও শিল্পসাহিত্যের কেন্দ্রস্থল। ১৯০০ সালে পিকাসো এক বন্ধুর সঙ্গে চলে চান প্যারিসে। জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়ে দিয়েছেন সেখানেই। পিকাসোর জীবনে ১৯০৭ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সময়ে তিনি শিল্পী জর্জেস ব্রাকের সঙ্গে কাজ করে শিল্পে ‘কিউবিস্ট’ আন্দোলনের সূচনা করেন। জটিল জ্যামিতিক পদ্ধতিতে আঁকা ছবিতে বাস্তবতা উপস্থাপনের এক নতুন কৌশল ছিল এটি। কোলাজশিল্পটির উদ্ভাবনেও তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। পিকাসোর আঁকা অসংখ্য বিখ্যাত ছবির একটি হলো ‘গোয়ের্নিকা’। ১৯৩৭ সালে স্পেনের স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর অনুরোধে জার্মানি ও ইতালি যৌথভাবে আক্রমণ চালায় স্পেনের প্রত্যন্ত গোয়ের্নিকা গ্রামে। এ ঘটনায় মর্মাহত পাবলো পিকাসো এঁকেছিলেন তার জগদ্বিখ্যাত ছবি ‘গোয়ের্নিকা’। গোয়ের্নিকাকে বলা হয় পৃথিবীর সর্বকালের সেরা যুদ্ধবিরোধী চিত্রকর্ম। তার আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো ‘দ্য ওল্ড গিটারিস্ট’, ‘গার্ল বিফোর আ মিরর’, ‘দ্য উইপিং ওমেন’, ‘উইমেন অব আলজিয়ার্স’, ‘সেলফ পোর্ট্রেট’, ‘থ্রি মিউজিশিয়ানস’, ‘সিটেড বাথার’ প্রভৃতি। ১৯৪৪ সাল থেকে ভাস্কর্যের দিকে মনোনিবেশ করেন পিকাসো। তার একটি বিখ্যাত ভাস্কর্যের নাম ‘শিকাগো পিকাসো’। মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন সাহিত্য রচনায়। লিখেছেন ৩০০টির বেশি কবিতা; দুটি নাটকও লিখেছেন। পিকাসো মারা গেছেন ১৯৭৩ সালের ৮ এপ্রিল, ফ্রান্সের মুজাই শহরে।
সংগৃহীত