সংগীতজ্ঞ, সুরকার, স্বরলিপিকার ও সংগীত পরিচালক। ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান, (১৯২৯-১৯৯৬) ১৯২৯ সালের ১ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলাধীন শিবপুর গ্রামে এক বিখ্যাত সংগীত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁও ছিলেন দেশবরেণ্য সংগীতবিদ। তার মাতার নাম উমর-উন-নেসা খানম। আবেদ হোসেন প্রথমে পিতার কাছে সেতার শিখে পরে স্বীয় অধ্যবসায়বলে অচিরেই একজন দক্ষ সেতারবাদক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সেতারের পর তিনি সরোদ ও সুরবাহার বাদনেও পারদর্শিতা অর্জন করেন। আবেদ হোসেন চলচ্চিত্রেও সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৭৩ সালে পদ্ধতিগতভাবে উচ্চাঙ্গসংগীত শিক্ষা দানের জন্য তিনি ‘ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ সংগীত নিকেতন’ নামে একটি সংগীত একাডেমি স্থাপন করেন এবং আমৃত্যু তার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আবেদ হোসেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একজন আমন্ত্রিত সংগীত প্রশিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ লেকচারার ছিলেন। বেতার ও টেলিভিশনে তিনি নিয়মিত সেতার ও সরোদ পরিবেশন করতেন। অর্কেস্ট্রা রচনা ও পরিচালনায় তিনি অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। দীর্ঘ ৩৬ বছর বেতারে সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৮৬ সালে তিনি মুখ্য সংগীত প্রযোজক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন এবং পরে প্রায় ১০ বছর চুক্তিভিত্তিতে এ দায়িত্ব পালন করেন। বিখ্যাত জার্মান সংগীতজ্ঞ ফিলিপ কার্ল শেফার ও মাইকেল গ্লুবের সঙ্গে তিনি সংগীত পরিবেশন করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। আবেদ হোসেন খান প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন পারদর্শী। তার দক্ষ তালিমের গুণে তার ছেলে ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান ও ভগ্নীপুত্র ওস্তাদ খুরশীদ খান সংগীতজগতে সুনামের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত এবং রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত। তিনি একজন সুদক্ষ বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতকারক ছিলেন। সংগীতে অনন্যসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৮৫ সালে ‘একুশে পদক’ দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করে। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি (বাফা), ইউনেস্কো ও সরকারি সংগীত মহাবিদ্যালয় যুগ্মভাবে তাকে ‘জাতীয় সংগীত সম্মেলন সম্মাননা ২০০২’ সম্মাননা প্রদান করে। তাছাড়া সদারঙ্গ সংগীত সমারোহ, সুরের আলো সংগীত একাডেমিসহ বহু সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান তাকে সম্মানিত করেন। তিনি ১৯৯৬ সালের ২৯ এপ্রিল মারা যান। [সংগৃহীত]