Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 3:37 pm

আজকের দিনে

চারণকবি বিপ্লবী মুকুন্দ দাসের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-১৯২২) ও আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০) চলাকালে ‘কর্মক্ষেত্র’, ‘পথ’, ‘পল্লীসেবা’ প্রভৃতি একের পর এক স্বদেশি যাত্রাপালা ও বিপ্লবাত্মক গান গেয়ে জনসাধারণের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করেন । স্বদেশি যাত্রার প্রবর্তক ছিলেন তিনি। ‘একবার বিদায় দে মা, ঘুরে আসি, হাসি হাসি পরবো ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী’Ñব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী ক্ষুদিরামের ফাঁসি উপলক্ষে রচিত এই অমর গানের স্রষ্টা তিনি। কবি মুকুন্দ দাস ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগনার বানরী গ্রামে ১৮৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম যজ্ঞেশ্বর দে এবং ডাকনাম যজ্ঞা। তার জন্মের পরে ওই গ্রাম পদ্মা নদীতে তলিয়ে গেলে সপরিবারে সবাই তার বাবার কর্মস্থল বরিশাল শহরে চলে আসেন। সেখানে ব্রজমোহন স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। ১৯ বছর বয়সে তিনি কীর্তনের দলে যোগ দেন। পরে একটি কীর্তনের দল গঠন করেন।

১৯০২ সাল থেকে মুকুন্দ দাস এক সাধুর কাছে দীক্ষা গ্রহণ এবং একই সময় বরিশালের দেশব্রতী অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। রামানন্দ নামক এই সাধকের কাছে দীক্ষা নেয়ার পর তার নাম হয় মুকুন্দদাস। এ নামেই তিনি সর্বসাধারণের কাছে পরিচিত হন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বরিশালে তুমুল ব্রিটিশবিরোধী বিক্ষোভ দেখা দেয়। মুকুন্দদাস এই বিক্ষোভে অংশ নেন ও জাগরণী গান রচনা করেন। সেসব গান বাঙালির জাতীয় জীবনে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করে।

ব্রিটিশ সরকারের সমালোচনা করে ‘মাতৃপূজা’ নাটকে রচনা ও পরিবেশনের অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজদ্রোহের অপরাধে অভিযুক্ত করে আড়াই বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। এছাড়া তার মাতৃপূজা নাটক ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। তবুও থেমে থাকেননি মুকুন্দ দাস। তিনি সাধন-সংগীত নামে ১০০টি গানসমৃদ্ধ একটি বই রচনা করেন।

বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। তার রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাতৃপূজা, সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী, কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ প্রভৃতি। যাত্রাগানে সারা বরিশাল মাতিয়ে রাখতেন তিনি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাকে চারণকবির মর্যাদা দেন। ১৯৩৪ সালের ১৮ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [সংগৃহীত]