তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি, আধুনিক তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল পাশা। তিনি একাধারে সামরিক ব্যক্তিত্ব, লেখক, বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রনেতা ছিলেন। তারই নেতৃত্বে তুরস্ক আধুনিক, পশ্চিমা ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্রে রূপান্তর হয়। তাকে আধুনিক তুরস্কের জনক (আতাতুর্ক) বলা হয়।
মোস্তফা কামাল গ্রিসের থেসালুনিকি শহরে জš§গ্রহণ করেন। তার জš§ তারিখটি অজ্ঞাত। ১৯ মে ১৮৮১ তারিখটি তিনি তার দাপ্তরিক কাজে জš§ তারিখ হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে এ দিনটিকেই তার জš§দিন হিসেবে ধরা হয়।
মোস্তফা কামাল ১২ বছর বয়সে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হন। ১৯০৫ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। মোস্তফা কামাল ১৯০৮ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ইয়াং তর্ক বিপ্লবে অংশ নেন। এই বিপ্লবের ফলে সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের পতন ঘটে।
১৯০৯ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত তিনি অটোমান সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯১১ সালের ইতালি-তুর্কিযুদ্ধে ও ১৯১২-১৩ সালে বলকানযুদ্ধে তুরস্কের হয়ে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে অটোমানরা পরাজিত হলে তাদের সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। এ সময় তুরস্ককে ভাগ না করতে তুর্কি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন মোস্তফা কামাল পাশা। ১৯২৩ সালে তুর্কি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেন।
মোস্তফা কামাল তুরস্ককে আধুনিক, প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতিরাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে বেশ কিছু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি পুরোনো সকল প্রকার শিক্ষা পদ্ধতির মুলোৎপাঠন করে সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন।
১৯২৬ সালের ৪ অক্টোবর তুরস্কের সিভিল কোড পাস হয়। নতুন আইনে নারীরা উত্তরাধিকার ও তালাকের মতো বিষয়গুলোয় পুরুষের সমান ক্ষমতা পায়। মোস্তফা কামালের মতে নারী ও পুরুষের একতার মাধ্যমে সমাজ তার উদ্দেশের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
১৯২৮ সালে তিনি তুর্কি শিক্ষা সংস্থা ও ১৯৩১ সালে তুর্কি ভাষা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাও চালু করেন। ল্যাটিনভিত্তিক আধুনিক তুর্কি বর্ণমালার প্রচলনসহ তুর্কি ভাষায় পবিত্র কোরআন শরিফ অনুবাদের উদ্যোগ নেন। তিনি তুরস্ককে অতীতের কার্যক্রম থেকে বের করে একটি আধুনিক, গণতন্ত্রী ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতিতে পরিণত করেন। ১৯৩৮ সালের ১০ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [সংগৃহীত]