ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা স্বাধীনতা সংগ্রামী বাগ্মী নেতা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক বিপিন চন্দ্র পালের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৫৮ সালের ৭ নভেম্বর সিলেটের এক বিত্তশালী কায়স্থ পরিবারে তিনি জš§গ্রহণ করেন। তার বাবা রামচন্দ্র পাল ছিলেন একজন ছোট জমিদার এবং সিলেট আইনজীবী শ্রেণির সদস্য। বৈষ্ণব মতানুসারী হলেও তিনি ছিলেন হিন্দু আচার-অনুষ্ঠান এবং ইসলামি চিন্তাচেতনা দ্বারা প্রভাবান্বিত। পিতামাতার একমাত্র পুত্র বিপিনচন্দ্র পাল সিলেট শহরে জনৈক মৌলভীর কাছে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮৭৯ সালের প্রথম দিকে একটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিপিনচন্দ্র তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং এ পদমর্যাদায় তিনি সিলেট ও সিলেটের বাইরেও চাকরি করেন। কিছুদিন তিনি কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরিরও সম্পাদক ছিলেন (১৮৯০-৯১)।
বিপিনচন্দ্র পাল ১৮৮৫ থেকে কংগ্রেসের প্রগতিশীল অংশের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন এবং ১৮৮৬ ও ১৮৮৭-তে কলকাতা এবং মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত যথাক্রমে কংগ্রেসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশনে যোগদান করেন। মালিকদের দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে নিপীড়িত আসামের চা-বাগান শ্রমিকদের পক্ষে আন্দোলন করার জন্য তিনি কংগ্রেসকে বাধ্য করেছিলেন। বঙ্গভঙ্গের পরবর্তী সময় স্বদেশি আন্দোলন ভারতব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বিপিন পাল ছিলেন এ আন্দোলনের অন্যতম নেতা। অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করেননি এবং চিত্তরঞ্জন দাশের বেঙ্গল প্যাক্টের (১৯২৩) তিনি সমালোচনা করেন। সি আর দাসের প্রভাবে সমকালীন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের রাজনীতির ঘটনা প্রবাহে নিরাশ হয়ে ১৯২৫ সালে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন। বিপিন পাল সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করেন এবং সিলেট থেকে বাংলা সাপ্তাহিক পরিদর্শক প্রকাশ করেন (১৮৮৬)। তিনি ইবহমধষর চঁনষরপ ঙঢ়রহরড়হ-এর সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (১৮৮২) এবং অল্পকাল খধযড়ৎব ঞৎরনঁহব-এ কাজ করেন। ১৮৮৭ সালে তিনি রানী ভিক্টোরিয়ার একটি জীবনীগ্রন্থ (বাংলায়) প্রকাশ করেন। অদম্য উৎসাহী বিপিনচন্দ্র পাল বিশ্বাস ও বিবেকের প্রশ্নে রাজনীতির ক্ষেত্রে কখনই আপস করেননি। জীবনের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই তিনি হিন্দু সমাজের কুসংস্কারগুলোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। নারীশিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ভারতীয় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক অগ্রদূত এবং নারী-পুরুষের সমানাধিকারের একজন প্রবক্তা। বিখ্যাত বাগ্মী বিপিনচন্দ্র পাল ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময় শ্রোতাদের উজ্জীবিত করতে পারতেন। ১৯৩২ সালের ২০ মে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। সংগৃহীত।