আজকের দিনে

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তার অধিকারী। তার তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। কিন্তু ব্যক্তিগত পড়াশোনা ও জ্ঞানী-গুণীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তিনি বিশ শতকের প্রথম দিকে মুসলিম সমাজের একজন বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। চাঁদপুর জেলার পাইকারদি গ্রামে তার জš§। প্রথম জীবনে তিনি একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু শিগগিরই তিনি বিমা কোম্পানির কাজ ছেড়ে নতুন পেশার সন্ধানে কলকাতায় গমন করেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকতা পেশা বেছে নেন। ১৯১৮ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি সওগাত নামে একটি সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে ১৯২২ সালে সাময়িকীটির প্রকাশনা স্থগিত রাখা হয়। ১৯২৬ সালে অবশ্য এর প্রকাশনা পুনরায় শুরু হয় এবং তখন থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে। ১৯২৬ সালে তিনি সওগাত সাহিত্য মজলিস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে তরুণ লেখকদের উৎসাহিত করেন। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, সুফিয়া কামাল এবং আরও অনেকে সওগাতকে তাদের প্রগতিশীল ও ভিন্ন মতপ্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেন। গোঁড়া মুসলিমদের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন লেখক, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ ও শিক্ষিত মুসলিম নারীদের ছবি সওগাতে ছাপান। কার্টুনের মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে সমাজের অব্যবস্থাকে তিনি তীব্রভাবে তুলে ধরেন। তখনকার দিনে মুসলিম নারীর ছবি ছাপানোটা ছিল এক অসাধারণ ঘটনা। ১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতায় ‘সওগাত কালার প্রিন্টিং প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের মধ্যে নতুন উদ্যম ও উদ্দীপনা সৃষ্টি এবং মুসলিম সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সওগাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ১৯৪৬ সালে ‘বেগম’ নামে একটি সচিত্র সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। দেশবিভাগের পর নাসিরউদ্দীন পূর্ববাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৪ সাল থেকে সওগাত পত্রিকা আবারও নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ছিলেন বাংলা একাডেমির ফেলো, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ‘বোর্ড অব ট্রাস্টি’-র সদস্য এবং ‘নজরুল ইনস্টিটিউট’-এর বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমির সম্মাননা পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে একুশে পদক এবং  স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার প্রাপ্ত হন। ১৯৭৬ সালে সৃজনশীল লেখক ও সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করার লক্ষ্যে তিনি নিজ নামে নাসিরউদ্দীন স্বর্ণ পদক প্রদান শুরু করেন। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন ১৯৯৪ সালের ২১ মে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সংগৃহীত

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০