আজকের দিনে

হিন্দুধর্মের মহান সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়। আজ (২২ মে) তার জš§দিন। পশ্চিম বাংলার রাধানগর গ্রামে এক রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে তার জন্ম। তিনি ১৮ শতকের ভারতের গতানুগতিক সনাতনী শিক্ষা লাভ করেন। তার বাল্যকালে ও প্রথম যৌবনে তিনি হিন্দি ও তার মাতৃভাষা বাংলা ছাড়াও বেশ কয়েকটি প্রাচ্যভাষা, যেমন সংস্কৃত, আরবি ও ফারসিতে উল্লেখযোগ্য ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। রামমোহনের প্রথম দিকের রচনাগুলো ছিল আরবি ও ফারসি ভাষায়। মনযারাতুল্ আদিয়ান শীর্ষক তার প্রথম গবেষণামূলক গ্রন্থটি বিভিন্ন ধর্মের আলোচনায় নিবেদিত। এটি কখনও ছাপা হয়নি এবং পরে হারিয়ে যায়। আরবি ভাষায় শিরোনাম ও মুখবন্ধ-সংবলিত ফারসি ভাষায় লিখিত তার গবেষণামূলক পুস্তিকা তুহফাত-উল-মুওয়াহিদ্দীনে রামমোহন শুধু এ গ্রন্থটির কথা উল্লেখ করেছেন। অল্প বয়সে রামমোহন তার নিজস্ব স্বাধীন সম্পত্তির মালিক হন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জড়িয়ে পড়েন। তার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বুদ্ধিগত বন্ধনমুক্তি অর্জনের সহায়ক হয়। সংস্কারমূলক ও উদারবাদী ধারণাগুলো প্রচারের জন্য ১৮২১ সালে রামমোহন সম্বাদ কৌমুদী নামে বাংলা সংবাদপত্র এবং ১৮২২ সালে মিরাত-উল-আখবার নামে ফারসি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। উপমহাদেশে জাতীয় চেতনার উšে§ষেও রামমোহন রায়ের প্রভূত অবদান ছিল। ভারতীয় জনগণের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আচরণে তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। ১৮২৩ সালে গভর্নর জেনারেল জন অ্যাডাম যখন ভারতীয় প্রেসের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন, তখন রামমোহন ও তার বন্ধুরা প্রিভি কাউন্সিলে স্মারকলিপি পেশ করে বলিষ্ঠভাবে এর প্রতিবাদ করেন। স্মারকলিপিটি এ যুক্তিতে প্রত্যাখ্যান করা হয় যে, যে দেশ রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করে না, সেখানে প্রেসের স্বাধীনতা থাকতে পারে না। আবার রামমোহন ও তার বন্ধু দ্বারকানাথ ঠাকুর উদ্যোগ গ্রহণ করে ১৮২৬ সালের ভারতীয় জুরি আইনের নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক বৈষম্যমূলক ধারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতার হিন্দু ও মুসলমান নাগরিকদের পক্ষে একটি স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাঠান। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিদারদের স্বার্থবিরোধী সরকারের রাজস্বনীতির বিরুদ্ধে রামমোহন ও তার বন্ধুরা গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের কাছে ১৮২৯ সালে আরেকটি আবেদনপত্র পেশ করেন। প্রধানত রামমোহন রায়ের উদ্যোগে বিদেশি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে জনসাধারণের প্রতিবাদগুলোর মধ্যেই জাতীয় চেতনাবোধের প্রাথমিক প্রকাশ পরিদৃষ্ট হয়।

১৮৩০ সালে খেতাবসর্বস্ব মোগল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর (১৮০৬-১৮৩৭) রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন এবং তার পক্ষে ব্রিটিশ রাজ ও পার্লামেন্টে ওকালতি করার জন্য ইংল্যান্ডে পাঠান। ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ সমাজের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক তিনি বিপুলভাবে সংবর্ধিত হন। ১৮৩২ সালে তিনি ফ্রান্সও সফর করেন। ১৮৩৩ সালে ব্রিস্টল ভ্রমণকালে তিনি রোগাক্রান্ত হন এবং ২৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। [সংগৃহীত]

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০