আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অসাধারণ প্রতিভাবান শিল্পী জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের পুরোধা। জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহে জš§গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৩ সালে কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং পাঁচ বছর সেখানে ব্রিটিশ-ইউরোপীয় স্টাইলের ওপর পড়াশোনা করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি আর্ট স্কুল অনুষদে যোগ দেন এবং তিনি তার চিত্রাঙ্কন চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৩৮ সালে সর্ব ভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে তার অঙ্কিত জলরঙের ছবির জন্য তিনি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশের বিভক্তির পর জয়নুল আবেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। সে সময় ঢাকায় কোনো আর্ট ইনস্টিটিউট বা অন্য কোনো শিল্প সম্বন্ধীয় প্রতিষ্ঠান ছিল না। জয়নুল আবেদিন ও তার কয়েকজন সহযোগী, যারা দেশ ভাগের পর ঢাকায় অভিবাসী হয়েছিলেন, আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ‘দুই মহিলা’ (গোয়াশ, ১৯৫৩), ‘পাইন্যার মা’ (গোয়াশ, ১৯৫৩) ও ‘মহিলা’ (জলরং, ১৯৫৩) হলো এ আমলের উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম। ‘ফসল মাড়াই’, জলরং (১৯৬৩) সমগ্র পঞ্চাশ ও ষাটের দশক ধরে জয়নুল আবেদিনের কর্মে রিয়ালিজম, নান্দনিকতা, পল্লীর বিষয়বস্তু ও প্রাথমিক রঙের প্রতি তার আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে ভিত্তি করে আঁকা ৬৫ ফুট দীর্ঘ স্ক্রল পেইন্টিং (চায়নিজ ইঙ্ক, জলরঙ ও মোম) ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারানো হাজারো মানুষের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আঁকা ৩০ ফুট দীর্ঘ ‘মনপুরা’ পেইন্টিংটির মধ্যে তাঁর কর্মের বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। জয়নুল যদিও প্রকৃতি ও মানবজীবনের চিত্র (পল্লী রমণীর ব্যক্তিগত মুহূর্তও অন্তর্ভুক্ত) এঁকেছেন; তবুও ষাটের দশকের শেষ দিক ও সত্তর দশকে আঁকা তার ছবির মাঝে গতি, মুভমেন্ট পরিস্ফুটিত। ‘সংগ্রাম’, ক্যানভাসে তেলরং (১৯৭৬)
১৯৭৫ সালে জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁওয়ে একটি লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহে একটি গ্যালারি (শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা) প্রতিষ্ঠা করেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে তার অঙ্কিত কিছু চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুনরুজীবিত করার আন্দোলনে তিনি নিজেকে সক্রিয়ভাবে জড়িত করেন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, পাশ্চাত্য টেকনিক ও রীতির প্রভাব এখানকার কিছু চিত্রশিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছিল, দেশীয় রীতিকে ধ্বংস করবে। কিন্তু ফুসফুসে ক্যানসারের কারণে তিনি তার কাজ সম্পন্ন করতে পারেননি। তার স্বাস্থ্য দ্রুত ভেঙে পড়তে শুরু করে। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ঢাকায় তার মৃত্যু হয়। সংগৃহীত