বাঙালি সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক ও ইসলামি পণ্ডিত মোহাম্মদ আকরম খাঁ’র জš§দিন আজ। তিনি ১৮৬৮ সারের ৭ জুন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তেমন ছিল না। কিন্তু জ্ঞানানুসন্ধানী আকরম খাঁ ইসলাম ধর্ম এবং বাংলা ও ভারতের মুসলমানদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তার পেশাগত ও রাজনৈতিক জীবন খুব অল্প বয়সেই শুরু হয়। সাংবাদিক হিসেবে তিনি প্রথম কাজ করেন আহলে-ই-হাদিস ও মোহাম্মদী আখবার পত্রিকায় তিনি নিজে কলকাতা হতে ১৯২০ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে জামানা ও সেবক নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সেবক অসহযোগ ও স্বদেশি আন্দোলনকে সমর্থন জোগায়। সেবক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং সরকারবিরোধী সম্পাদকীয় লেখার জন্য আকরম খাঁ গ্রেপ্তার হন। পরে ১৯৩৬ সালের অক্টোবরে তিনি ওই সময়ের একমাত্র বাংলা দৈনিক পত্রিকা আজাদ প্রকাশ করেন। এ পত্রিকাটি বঙ্গ বিভাগোত্তরকালে মুসলিম লীগের পক্ষে জনসমর্থন সৃষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রাখে। আকরম খাঁ’র রাজনৈতিক জীবন শুরু ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসের একজন সমর্থক হিসেবে। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল বাঙালি মুসলমানদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষা করা। এ উদ্দেশ্যে তিনি ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী আকরম খাঁ ১৯২২ সালে কলকাতায় চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ্য পার্টি এবং ১৯২৩ সালে বেঙ্গল প্যাক্টের প্রতি সমর্থন জানান। ১৯২৬-২৭ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সমসাময়িক অন্য রাজনৈতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে আকরম খাঁ ভারতীয় জাতীয় রাজনীতির প্রতি আস্থা হারিয়ে স্বরাজ্য পার্টি ও কংগ্রেস উভয় দল থেকেই পদত্যাগ করেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত তিনি প্রজা বা কৃষক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৩৫ সালে বেঙ্গল প্রজা সমিতিতে অনৈক্য দেখা দিলে ১৯৩৬ সালে তিনি কৃষক রাজনীতি ত্যাগ করেন এবং সক্রিয়ভাবে মুসলীম লীগে যোগ দেন। ভারত বিভাগের পর (১৯৪৭) তিনি পূর্ববঙ্গে চলে আসেন এবং ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমস্যা ও সমাধান, মোস্তফা চরিত এবং আমপারার বঙ্গানুবাদ। তার ‘মোসলেম বাংলার সামাজিক ইতিহাস’ গ্রন্থে তিনি পীরবাদ ও সুফিবাদের প্রভাবসহ বাঙালি সমাজের বিভিন্ন দিক এবং বাঙালি মুসলমানদের অবনতির কারণ আলোচনা করেছেন। তাছাড়া তিনি আকবরের ‘দীন-ই-ইলাহী’র সমালোচনা করেন এবং আওরঙ্গজেবের ধর্মনিষ্ঠা ও তৎকালীন সমন্বয় প্রবণতার বিরুদ্ধে তার জেহাদের প্রশংসা করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের ১৮ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। [সংগৃহীত]
