বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী, শিক্ষক, গবেষক ও সমালোচক সুভাষ চৌধুরীর মৃত্যু দিবস আজ। রবীন্দ্র সংগীতের শিক্ষক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। তিনি ১৯৩৩ সালের ১১ জুলাই ভারতের বিহারের বোজুড়িতে (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃপুরুষের আদি নিবাস পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কলাগাছিয়া গ্রামে। পিতা নরেন্দ্রনাথ চৌধুরী। তার মায়ের নাম লীলাবতী দেবী। সুভাষ চৌধুরী সরিষা হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর বিশ্বভারতীর সংগীতভবনে ভর্তি হন। তিনি সেখানে ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, শান্তিদেব ঘোষ প্রমুখ বিশিষ্ট সংগীতশিল্পীর কাছে গানের তালিম নেন। এসরাজ বাজানো শিখেছিলেন অশেষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। সেখান থেকে তিনি সংগীতে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে প্রথমে পুরুলিয়া ট্রেনিং কলেজে (১৯৫৭-৬১) এবং পরে সরিষা রামকৃষ্ণ মিশনের উচ্চ বিদ্যালয়ে (১৯৬১-৬৫) রবীন্দ্র সংগীতের শিক্ষকরূপে কাজ করেন। প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন অনেক শিল্পীর সঙ্গে যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কিশোর কুমার মুরলীবালকৃষ্ণ প্রমুখ। ১৯৬৫ সালে যোগ দেন বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগের স্বরলিপি দপ্তরে। আর এই সময়েই প্রতিষ্ঠা করেন ইন্দিরা সংগীত শিক্ষায়তন। সেখানে তার শিক্ষকতায় তৈরি হয়েছেন বহু বিশিষ্ট শিল্পী। সংগীত শিক্ষক ও পরিচালক হিসেবে যুক্ত ছিলেন বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গেও। বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগের হয়ে স্বরবিতানের জন্য ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত। রবীনন্দ্রসংগীত নিয়ে বেশ গবেষণাও করেছেন তিনি। এ বিষয়ে তিনি বেশকটি গ্রন্থও রচনা করেন। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে অবসরগ্রহণের সময় তিনি ছিলেন স্বরলিপি-অধীক্ষক। এছাড়া তিনি রবীন্দ্র সংগীত নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনাও করেছেন, চর্চা করছেন রবীন্দ্রনাথের গান প্রকাশের ইতিহাস নিয়েও। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলোÑ‘রবীন্দ্রসংগীতায়ন ২ খণ্ড’ (সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে) সংকলিত ও সংবলিত (১৯৮২), ‘লিখন আমার’, ‘মুক্তির গান’, ‘ইন্দিরা দেবী, প্রমথ চৌধুরী পত্রাবলী’ (১৯৮৭), ‘গীতবিতানের
জগৎ’ (২০০৪) ও ‘রবীন্দ্রনাথের গান ও অন্যান্য’। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [সংগৃহীত]