Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:29 am

আজকের দিনে

‘শিল্পগুরু’ উপাধিতে ভূষিত বাংলাদেশের পথিকৃৎ শিল্পীদের অন্যতম সফিউদ্দীন আহমেদ (১৯২২-২০১২)। ১৯২২ সালের ২৩ জুন কলকাতার ভবানীপুরস্থ নন্দন রোডে পিতৃগৃহে এ চিত্রশিল্পীর জন্ম। বাবার নাম শেখ মতিনউদ্দিন (ওরফে মতিউদ্দিন) ও মায়ের নাম বিবি জমিলা খাতুন। পিতৃগৃহে সচ্ছলতা ও উন্নত সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল। তার পিতৃপ্রদত্ত নাম শেখ সফিউদ্দীন আহমেদ, যার প্রথম অংশটি নিজেই পরে বর্জন করেন। সফিউদ্দীন আহমেদ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন কলকাতার পদ্মপুকুর হাইস্কুলে। নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় ১৯৩৬ সালের জুলাই মাসে তিনি কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। আর্ট স্কুলে ছয় বছরের কোর্স অধ্যয়নকালে বহির্দৃশ্য নিয়ে স্কেচ করা ছিল বাধ্যতামূলক। ১৯৪২ সালে তিনি আর্ট স্কুলে ফাইন আর্ট বিভাগ থেকে ছয় বছরের কোর্স শেষ করেন এবং জলরং ও তেলরঙে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি উড এনগ্রেভিং মাধ্যমটিও গভীরভাবে রপ্ত করেন। ওই বছরেই ভর্তি হন টিচারশিপ কোর্সে। কিন্তু ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় চাকরিতে যোগ দিলে তার শিক্ষা গ্রহণ ব্যাহত হয়। পরে ১৯৪৪ সালে ওই কোর্সে আবার ভর্তি হয়ে ১৯৪৬ সালে তা কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি শিক্ষকতায় নিযুক্ত হয়ে ১০ বছর শিক্ষকতা করার পর ১৯৫৬ সালে ছাপচিত্রে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য যান লন্ডনে। ১৯৪৬ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত টিচারশিপ কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন এবং জুলাই মাসে কলকাতা আর্ট স্কুলে ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষক নিযুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিত ১৪ আগস্ট তিনি ঢাকা আসেন এবং ১৫ আগস্ট ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ড্রইংয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। অতঃপর ঢাকায় আর্ট স্কুল গড়ার ১৯৮৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইনস্টিটিউটে রূপান্তরিত হওয়ার পর ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি এর ছাপচিত্র বিভাগে সংখ্যাতিরিক্ত শিক্ষক হিসেবে এবং ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান সরকারের ‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে ‘একুশে পদক’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সম্মাননা’ লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে ‘বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো’ মনোনীত হন। ওয়াশিংটনের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, জাতীয় জাদুঘর ও শিল্পকলা একাডেমীসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের সংগ্রহে তার শিল্পকর্ম সংরক্ষিত আছে। তবে তার অধিকাংশ চিত্রকর্মই আছে তার পারিবারিক সংগ্রহে। ২০১২ সালের ২০ মে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে এই মহান শিল্পীর জীবনাবসান ঘটে। [সংগৃহীত]