আজকের দিনে

সিরাজউদ্দৌলা বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে সিরাজ পরাজিত ও নিহত হওয়ার পর ইংরেজরা বাংলার নবাবদের তাদের হাতের পুতুলে পরিণত করে এবং নিজেরাই বাংলার প্রকৃত শাসকে পরিণত হয়। মির্জা মুহম্মদ সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন আলীবর্দী খানের দৌহিত্র এবং জৈনুদ্দীন আহমদ খান ও আমিনা বেগমের পুত্র। ১৭৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জš§গ্রহণ করেন। তার জšে§র পরপরই আলীবর্দী খান বিহারের ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। এ কারণে পরিবারে সিরাজ ‘সৌভাগ্য সূচক সন্তান’ হিসেবে বিবেচিত হন। সিরাজের প্রতি তার মাতামহের ছিল বিশেষ স্নেহ ও পক্ষপাত। সিরাজের শিক্ষাজীবন কেটেছে তার পিতামহের গৃহে। করম আলীর ‘মুজাফ্ফর নামা’ অনুসারে নবাব আলীবর্দী খান শাসনকার্য পরিচালনার কলাকৌশল এবং একজন যুবরাজের জন্য আবশ্যিক অন্যান্য গুণাবলিতে তাকে পারদর্শী করে তুলতে চেষ্টা করেন। তিনি প্রচলিত শিক্ষা লাভ করেন এবং খুব সম্ভবত তা যথোপযুক্ত ছিল না। বৃদ্ধ নওয়াবের অন্ধ স্নেহ এবং স্তাবকদের অতি প্রশংসায় কারণে প্রথম জীবনে সিরাজ খুব সম্ভবত কিছু বাড়াবাড়ি করেন এবং আলীবর্দী তা উপেক্ষা করেন। সিরাজকে ঢাকায় নৌবাহিনীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়, আর তার ছোট ভাই ইকরামউদ্দৌলা ছিলেন সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে। ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ১০ এপ্রিল বৃদ্ধ নবাব আলীবর্দী খানের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পূর্বে তিনি সিরাজকে রাজ্যের শত্রæদের দমন এবং প্রজা সাধারণের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে সব অন্যায়-অবিচার দূর করার উপদেশ দেন। জনগণের আনুগত্য অর্জন এবং তার (আলীবর্দী খান) পদাঙ্ক অনুসরণ করার জন্য তিনি সিরাজকে বিশেষভাবে তাগিদ দেন। সিরাজ অতি অল্প সময় (১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল থেকে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত কিঞ্চিদধিক এক বছর) বাংলা শাসন করেন। এ সময় তার জন্য বাংলার মসনদ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। কোম্পানির বিরুদ্ধে তার অভিযোগগুলোর মধ্যে ছিল প্রথমত, নওয়াবের অনুমতি ব্যতীত ফোর্ট উইলিয়ম নামক দুর্গ নির্মাণ। দ্বিতীয়ত, ইংরেজরা  মোগল শাসকদের প্রদত্ত বাণিজ্যিক সুবিধার অপব্যবহার করতে থাকে। ফলে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়; এবং তৃতীয়ত, ইংরেজরা সরকারি তহবিল তছরুপকারী কৃষ্ণদাসকে (রাজবল্লভের পুত্র) আশ্রয় প্রদান করে। শেষ পর্যন্ত নওয়াবের বিরুদ্ধে কোম্পানি সাফল্যের সঙ্গে একটি ষড়যন্ত্র সম্পন্ন করে এবং মীরজাফর, জগৎশেঠ ও অন্যান্য ক্ষুব্ধ অমাত্যের সমর্থন লাভ করে। সবকিছু সম্পন্ন হওয়ার পর ক্লাইভ ও ওয়াটসনের অধীনে কোম্পানির শক্তি মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ যাত্রা করে। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন নবাব পলাশীর প্রান্তরে ক্লাইভের মুখোমুখি হন। পলাশীর যুদ্ধে নবাব পরাজিত হন এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান। পাটনা যাওয়ার পথে মীরজাফরের পুত্র মীরনের নির্দেশে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই নবাব নিহত হন। সিরাজের আর যা-ই দোষ থাক, এ কথা সত্য যে তিনি স্বদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বা দেশ বিক্রি করেননি। ইতিহাসের পাতায় সিরাজ উচ্চতর মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। সেই রাজনৈতিক মঞ্চের প্রধান নায়কদের মধ্যে একমাত্র তিনিই কখনও প্রতারণা বা শঠতার আশ্রয় নেননি। [সংগৃহীত]

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০