বাংলাদেশের প্লে-ব্যাক গানের খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী। এন্ড্রæ কিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী শহরে জš§গ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম এন্ড্রæ কিশোর কুমার বাড়ৈ। তার পিতার নাম ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতার নাম মিনু বাড়ৈ। এন্ড্রæ কিশোরের সংগীতানুরাগী মাতার প্রিয় শিল্পী ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী কিশোর কুমার। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে তিনি পুত্রের নাম রাখেন কিশোর। মায়ের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় এন্ড্রæ কিশোর সংগীত জগতে পদার্পণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা করেন। এন্ড্রæ কিশোর ছয় বছর বয়স থেকে আব্দুল আজিজ বাচ্চুর কাছে সংগীত শিক্ষা শুরু করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বেতার আয়োজিত প্রতিভা অন্বেষণ অনুষ্ঠানে দেবু ভট্টাচার্য রচিত ‘সোহেলি ও সোহেলি’ গানটি গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করে নেন। এর পরই বাংলাদেশ বেতার তাকে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীত, আধুনিক গান ও দেশাত্মবোধক গানের জন্য তালিকাভুক্ত করে নেয়।
এন্ড্রæ কিশোর চলচ্চিত্রের নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৭৭ সালে। ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে সুরকার আলম খান রচিত ‘অচিন পুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানটির মধ্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু। ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গান গেয়ে এন্ড্রæ কিশোর বিপুল জনপ্রিয় হন। এছাড়া ‘ডাক দিয়াছে দয়াল আমারে’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘সবাইতো ভালোবাসা চায়’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’ প্রভৃতি তার জনপ্রিয় গান। বড় ভালো লোক ছিল, সারেন্ডার, ক্ষতিপূরণ, পদ্মা মেঘনা যমুনা, কবুল, আজ গায়ে হলুদ, সাজঘর এবং কী যাদু করিলা চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া সেরা পুরুষ প্লে-ব্যাক গায়ক হিসেবে প্রিন্সেস টিনা খান, স্বামী-স্ত্রী, প্রেমের তাজমহল, মনে প্রাণে আছ তুমি এবং গোলাপী এখন বিলাতে সিনেমার জন্য পাঁচবার বাচসাস পুরস্কার প্রাপ্ত হন। বাংলাদেশের সংগীত জগতে প্লে-ব্যাক গানের সম্রাট খ্যাত এন্ড্রæ কিশোর ১৫ হাজারেরও অধিক গান গেয়ে শ্রোতাদের মন জয় করেন। এন্ড্রæ কিশোর ২০১৮ সালে বøাড ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং দীর্ঘ ৯ মাস তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা না থাকায়, তিনি ক্যানসার নিয়েই দেশে ফেরেন। ২০২০ সালের ৬ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে রাজশাহীতে নিজ বাসভবনে শিল্পী এন্ড্রæ কিশোর মৃত্যুবরণ করেন। [সংগৃহীত]
