কবি, ধর্মপ্রচারক, সমাজ-সংস্কারক মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ১৮৬১ সালে যশোরের কালীগঞ্জ উপজেলার ঘোপ গ্রামে মাতুলালয়ে তিনি জš§গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস একই এলাকার ছাতিয়ানতলায়। মেহেরুল্লাহ যশোরের মৌলবি মোসহারউদ্দীনের নিকট ধর্মশিক্ষা এবং মৌলবি মোহাম্মদ ইসমাইলের কাছে আরবি, ফারসি, উর্দু ভাষা ও সাহিত্যে শিক্ষা লাভ করেন। এ সময় তিনি কোরআন-হাদিস ও ফারসি সাহিত্যেও বিশেষ জ্ঞান অর্জন করেন। দারিদ্র্যের কারণে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভ সম্ভব হয়নি। তিনি কিছুকাল সরকারি চাকরি করার পর দর্জিবিদ্যায় প্রশিক্ষণ নিয়ে যশোরে দর্জির দোকান খুলে স্বাধীন ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময় খ্রিষ্টান পাদরিরা ইসলাম ও হজরত মোহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে অপপ্রচার করার চেষ্টা করলে মেহেরুল্লাহ বক্তৃতা ও লেখার মাধ্যমে তার প্রতিবাদ করেন। এ ব্যাপারে পাদরিদের সঙ্গে তিনি একাধিকবার প্রকাশ্যে বিতর্কে অবতীর্ণ হন। ক্রমে তিনি ধর্মপ্রচারে আত্মনিয়োগ করেন এবং একজন ভালো বক্তা হিসেবে অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। মেহেরুল্লাহ ইসলামের অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে বাংলা ও আসামের বিভিন্ন ধর্মীয় জলসায় বক্তৃতা দিয়ে দরিদ্র, হতাশাগ্রস্ত ও সম্বিতহারা মুসলমান সমাজকে জাগানোর চেষ্টা করেন। তিনি খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত ও বিপথগামী অনেক মুসলমানকে ইসলাম ধর্মে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি যশোরের মনোহরপুর গ্রামে ‘মাদরাসায়ে কারামাতিয়া’ এবং ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ‘এসলাম ধর্মোত্তেজিকা সভা’ (১৮৮৯) স্থাপন করেন। কলকাতার সুধাকর, ইসলাম প্রচারক প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লেখালেখি করতেন। ধর্ম ও সমাজ-সংক্রান্ত তার প্রধান গ্রন্থগুলো হলো: খ্রিষ্টীয় ধর্মের অসারতা (১৮৮৭), বিধবাগঞ্জনা ও বিষাদভাণ্ডার (১৮৯৪), মেহেরুল এসলাম (১৮৯৭), হিন্দুধর্ম রহস্য ও দেবলীলা (১৮৯৮, ২য় সং) এবং মুসলমান ও খ্রিষ্টান তর্কযুদ্ধ (১৯০৮, ২য় সং)। বিখ্যাত ফরাসি লেখক অঁদ্রে মালরো বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা প্রদান প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, ‘তার কাছে বই যে শুধু প্রয়োজনীয় রূপে থাকবে তা নয়, একজন বুদ্ধিজীবীর জীবনে আসলে একটি আদর্শ তাকে ঘিরে রাখবে এবং তার জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করবে।’ মফস্বলের বাংলায় বসবাস করেও এ রকমের অসামান্য ব্যক্তিত্ব প্রত্যক্ষ করা যায় মুনশী মেহেরুল্লাহর মধ্যে। খুব স্বল্প শিক্ষিত অনেকটা স্বশিক্ষিত এই মুনশী কিন্তু সমকালে তার স্বধর্মীদের ওপর এমন সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, তাকে মুসলিম বাংলার রামমোহন আখ্যা দেয়া হয়েছিল (মুহম্মদ আব্দুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত)। মেহেরুল্লাহ ১৯০৭ সালের ৭ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। [ সংগৃহীত]
আজকের দিনে

আরো খবর ➔
সর্বশেষ
আর্কাইভ

রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র | শনি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ |
৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ |
১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ |
২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ |
২৯ | ৩০ |