কুদরাত-এ-খুদা, মুহম্মদ (১৯০০-১৯৭৭) বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও লেখক। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভ‚ম জেলার মাডগ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৮ সালে তিনি কলকাতা মাদরাসা থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯২৪ সালে রসায়ন শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং এই কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। রসায়ন শাস্ত্রে উচ্চতর গবেষণার জন্য মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালযরে প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। তিনি ১৯২৯ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। কুদরাত-এ-খুদা প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়নের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৩৬ সালে তিনি বিভাগীয় প্রধানের পদে উন্নীত হন। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৬ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে প্রেসিডেন্সি কলেজে ফিরে আসেন। ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) চলে আসেন এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান সরকারের জনশিক্ষা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৯-এ তিনি পাকিস্তান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হন। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বর্তমানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ বা সায়েন্স ল্যাবরেটরিজ) পূর্বাঞ্চলীয় গবেষণাগারগুলোর প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন এবং ঢাকায় গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন।
কুদরাত-এ-খুদা বনৌষধি, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও খনিজ পদার্থের ওপর গবেষণাকার্য পরিচালনা করেন। অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তিনি স্থানীয় গাছ-গাছড়া থেকে জৈব রাসায়নিক উপাদান নিষ্কাশনে সক্ষম হন; যা ওষুধ হিসেবে ব্যবহƒত হয়ে থাকে। কুদরাত-এ-খুদা ও তার সহকর্মীবৃন্দ ১৮টি বৈজ্ঞানিক পেটেন্ট আবিষ্কার করেন। পাটকাঠি থেকে পারটেক্স উৎপাদন ছিল তার সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক অবদান। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চাকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে কুদরাত-এ-খুদা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। পবিত্র কোরআনের পূত কথা ও অঙ্গারী জওয়ারাসহ কয়েকটি ধর্মীয় পুস্তকও তিনি রচনা করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনসহ বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৬ সালে ‘একুশে পদক’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’ প্রদান করে। বিজ্ঞানে নেতৃস্থানীয় অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুদরাত-এ-খুদাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর এই মহান দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [সংগৃহীত]