লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার, (১৯৪২-১৯৭৫) সামরিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার। ১৯৪২ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার ভবানীপুরে তার জন্ম। পিতা মোহাম্মদ ইসরাইল ছিলেন পুলিশ অফিসার। পরবর্তী সময়ে তিনি কিশোরগঞ্জ আদালতে আইন ব্যবসায় নিয়োজিত হন। তার মায়ের নাম হাকিমুন নেসা। এ টি এম হায়দার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন পাবনার বীণাপানি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। ১৯৫৮ সালে তিনি কিশোরগঞ্জের রামানন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৬১ সালে কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। ১৯৬৫ সালে লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে তিনি বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এ টি এম হায়দার ১৯৬৬ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে এমএসসি প্রথম পর্ব শেষ করার পর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তিনি কাকুলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আর্টিলারি ফোর্সে অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি পাকিস্তানে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি)-বিষয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণ লাভ করেন। পরে তিনি মুলতান ক্যান্টনমেন্টে যোগ দেন এবং ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত থাকেন। ১৯৭০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এটিএম হায়দার ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন এবং কুমিল্লা সেনানিবাসে তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে তিনি ঢাকায় বদলি হন এবং এর কিছুদিন পরই পুনরায় কুমিল্লা সেনানিবাসে বদলি হন।
এ টি এম হায়দার ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখান থেকে তিনি তেলিয়াপাড়া যান এবং কিছু সংখ্যক সৈন্যসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তিনি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কসহ মুসল্লি রেলওয়ে সেতু বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেন। এরপর তিনি মেলাঘরে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের অধীনে সেকেন্ড কমান্ডার নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন হায়দার মেলাঘরে একটি স্টুডেন্ট কোম্পানি গঠন করেন এবং গেরিলাদের কমান্ডো ও বিস্ফোরক বিষয়ক প্রশিক্ষণ দানের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর মেজর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে কে-ফোর্স গঠিত হলে ক্যাপ্টেন হায়দার কমান্ডিং অফিসার নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭২ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে ১৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গঠিত হলে এ টি এম হায়দার এর অধিনায়ক নিযুক্ত হন এবং মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি লে কর্নেল পদে উন্নীত হন এবং চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ২১ অক্টোবর তিনি রুমা সেনানিবাসে বদলি হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা সেনানিবাসে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল। ৩ নভেম্বর হায়দার পারিবারিক সমস্যার কারণে ঢাকা আসেন এবং খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের সঙ্গে লে. কর্নেল এ টি এম হায়দার নিহত হন। তার মৃতদেহ ১১ নভেম্বর উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এ টি এম হায়দার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত হন।
[সংগৃহীত]