দেশের শীর্ষস্থানীয় মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ও চর্চাবিদ শিক্ষক, বিদ্বান, সম্পাদক ও রাজনৈতিক কর্মী বদরুদ্দীন উমর। আজ তার ৯২তম জন্মদিন। ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমান শহরে। তার পিতার নাম আবুল হাশিম ও মাতার নাম মাহমুদা আখতার মেহের বানু বেগম। আবুল হাশিম একজন সাম্যবাদী। পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধী ছিলেন, তথাপি তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বদরুদ্দীন উমর ১৯৪৮ সালে বর্ধমান টাউন স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫০ সালে তিনি বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। দর্শন বিষয়ে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৫৫ সালে। ১৯৬১ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়? থেকে ফিলোসফি, পলিটিকস অ্যান্ড ইকোনমিকস (পিপিই) ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন: প্রথমে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। বদরুদ্দীন উমর ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয় তারই হাত ধরে। ১৯৬৮ সালে পদত্যাগ করেন। তিনি সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন এবং কেন্দ্রীয়? সমন্বয়?কারী গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের। তিনি সভাপতি আছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের এবং বাংলাদেশ লেখক শিবিরের কেন্দ্রীয়? কমিটির সদস্য। বদরুদ্দীন উমর তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন একটি ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠনের প্রচেষ্টায়। একজন স্বীকৃত কমিউনিস্ট হওয়া সত্ত্বেও উমর ভারত ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, বুর্জোয়াদের আধিপত্যের বিপরীতে শ্রমিক শ্রেণির মানুষের জন্য বিকল্প নেতৃত্ব দেয়ার পরিবর্তে উভয় দেশের কমিউনিস্ট পার্টি হাস্যকরভাবে নিজেদের ‘মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগী সংগঠনের’ পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে।
সাপ্তাহিক ‘গণশক্তি’ এবং মধ্য ’৭০-এ ‘সংস্কৃতি’ নামের মাসিক পত্রিকা (বর্তমানে পত্রিকাটি ৪৭ বছর অতিক্রম করছে) সম্পাদনার গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। তিনি একইসঙ্গে আশির দশকের শুরুর দিকে ‘নয়া পদধ্বনি’ প্রকাশের মূল দায়িত্বও পালন করেন।
তিন খণ্ডে উমর রচিত পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (১৯৭০, ১৯৭৬, ১৯৮১) বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনায় পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ- বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ, যুদ্ধ পূর্ব বাঙলাদেশ, ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, বাঙলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কয়েকটি দিক, বাঙলাদেশে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ধারা, সামরিক শাসন ও বাঙলাদেশের রাজনীতি প্রভৃতি। ইংরেজিতেও বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছে তার। ১৯৭২ সালে বদরুদ্দীন উমর বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন, তবে তিনি তা সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার পান এবং সেটিও প্রত্যাখ্যান করেন।
[সংগৃহীত]