আজকের দিনে

আইয়ুব, আবু সয়ীদ (১৯০৬-১৯৮২) বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক। কলকাতায় ওয়েলেসলি স্ট্রিটে পিতামহের বাড়িতে তার জন্ম। পিতা আবুল মোকারেম আব্বাস ছিলেন বড়লাটের করণিক, মাতা আমিনা খাতুন। তার বড় ভাই ডাক্তার আব্দুল গনি ছিলেন সাবেক ভারতীয় রেলমন্ত্রী।

আইয়ুবের শৈশবের কিছুকাল সিলেটে অতিবাহিত হয়। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি কলকাতার সেন্ট অ্যান্টনিজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। আকৈশোর ভগ্নস্বাস্থ্যের অধিকারী আইয়ুব ছিলেন মানসিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় তীক্ষè এবং পরিশীলিত।  প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পদার্থবিদ্যায় অনার্স ডিগ্রি লাভ করে তিনি আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ বিষয়ে আগ্রহী হন এবং অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের সাহায্যে এডিংটনের ‘ম্যাথামিটেক্যাল থিওরি অব রিলেটিভিটি’র ওপর অধ্যয়ন করেন; কিন্তু অসুস্থতার কারণে এমএসসি পরীক্ষা না দিয়ে তিনি বিভাগ পরিবর্তন করে দর্শনে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কৃষ্ণনগর কলেজে অধ্যাপনা করেন। কিছুকাল  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতীতেও অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৪-৫৬ সালে তাকে রকফেলার ফাউন্ডেশনের ফেলো নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬১ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ডিয়ান স্টাডিজ খোলা হলে তিনি এর প্রথম বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত হন। এরপর তিনি ১৯৬৯-৭১ সাল পর্যন্ত সিমলার ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজে ফেলোরূপে কর্মরত ছিলেন। অসুস্থতার কারণে আইয়ুবের কর্মজীবনে ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি বটে, কিন্তু চিন্তাশীলতায়? তিনি ছিলেন একান্তভাবে আত্মমগ্ন, কখনও কখনও সৃষ্টিমুখর; বন্ধু ও সজ্জন সভায়? তিনি ছিলেন একজন বিদগ্ধ বক্তা ও বিতার্কিক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার সমর্থন এবং বুদ্ধিজীবীদের সহায়তাদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। আবু সয়ীদ আইয়ুুবের প্রথম বাংলা প্রবন্ধ ‘বুদ্ধিবিভ্রাট ও অপরোক্ষানুভূতি’ ত্রৈমাসিক পরিচয়  পত্রিকায় প্রকাশিত হলে  রবীন্দ্রনাথ,  প্রমথ চৌধুরী ও  অতুলচন্দ্র গুপ্তের প্রশংসা করেন। সম্পাদক সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাকে দিয়ে দ্রুত ‘সুন্দর ও বাস্তব’  শীর্ষক প্রবন্ধ রচনা করান। আবু সয়ীদ আইয়ুবের প্রকাশনা তালিকা খুব দীর্ঘ না হলেও অত্যন্ত মূল্যবান। তার আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৮) গ্রন্থটি কলকাতার সাহিত্য-জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। রবীন্দ্রানুসারী শিল্পবোধের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম খুব বেশি না হলেও তার মৌলিক ও শিল্পনৈপুণ্যে ভাস্বর রচনাবলি তাকে বাংলার সাহিত্য-আসরে একটি বিশিষ্ট আসনে অভিষিক্ত করেছে। আবু সয়ীদ ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’, ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’ বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাকে ‘রবীন্দ্র তত্ত্বনিধি’ উপাধি প্রদান করে। দীর্ঘকাল পার্কিনসন্স রোগে ভোগার পর ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়।

[সংগৃহীত]

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০