সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক সত্য সাহার জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ফতেয়াবাদ গ্রামে। সত্য সাহার সংগীতে হাতেখড়ি হয় কাকা রবীন্দ্রপাল সাহার কাছে। ১৯৪৬ সালে নারায়ণ হাই স্কুলে অধ্যয়নকালে তিনি পণ্ডিত সুপর্ণা নন্দীর কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি ভজন গানেও কিছু পারদর্শিতা অর্জন করেন। সত্য সাহা ১৯৫৬ সালে বাংলাদেশ বেতারে সুরকার পঞ্চানন মিত্রের সহকারী হয়ে সংগীত পরিমণ্ডলে যুক্ত হন। ১৯৫৮-৫৯ সালে সহকারী সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি ১২টি ছায়াছবির সংগীত পরিচালনা করেন। ১৯৬১ সালে তিনি বেতারশিল্পীর মর্যাদায় তালিকাভুক্ত হন। এ সময় ‘তোমার আমার’ ছায়াছবিতে তাকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দেখা গেলেও সংগীত পরিচালক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং (১৯৬৪)’ ছায়াছবির মাধ্যমে। এ ছবিতে তার বিখ্যাত গান ছিল ‘তুমি আসবে বলে, ভালোবাসবে বলে’। এ ছবির আগে সত্য সাহা তার জীবনের প্রথম ছবি ‘জানাজানি’র কাজ শুরু করেন, কিন্তু ‘সুতরাং’ ছবির পরে ‘জানাজানি’ মুক্তি পায়। বাংলাদেশের কৃষ্টিনির্ভর ও সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতে নির্মিত হয় ‘রূপবান’। প্রথমে সাদাকালো, পরে রঙিন। ছবিটি নির্মিত হয় কলকাতা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। এ বিখ্যাত ছবিটির সংগীত পরিচালক ছিলেন সত্য সাহা। তার সংগীত পরিচালনায় অন্য যেসব ছায়াছবি নির্মিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সৈয়দ শামসুল হকের ফির মিলেঙ্গি হাম দুনো (১৯৬৬), রওনক চৌধুরীর ভাওয়াল সন্ন্যাসী, সুভাষ দত্তের কাগজের নৌকা, সৈয়দ আওয়ালের গুনাই বিবি, অপরিচিতা, বশির হোসেনের ১৩ নম্বর ফেকু গোস্তাগার লেন (১৯৬৬), আজিজুর রহমানের সাইফুল মূলক্ বদিউজ্জামান, সুভাষ দত্তের আয়না ও অবশিষ্ট ছবির নাম উল্লেখ করা যায়। এছাড়া রয়েছে বাঁশরী, চেনা-অচেনা, এতটুকু আশা, পরশমণি, মোমের আলো প্রভৃতি। সত্য সাহার স্ত্রী রমলা সাহার প্রযোজনায় আশির দশকে নির্মিত বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘অশিক্ষিত’ ও ‘ছুটির ঘণ্টা’ ছবির কাহিনি, চিত্র, সংলাপ ও সংগীত তৎকালীন বাঙালি সমাজে ব্যাপক সাড়া জাগায়। বাংলা ভালো চলচ্চিত্রের সংকটকালে এ ছবি দুটি সেসময় অসংখ্য দর্শকের মনে স্থান করে নেয়। সত্য সাহার সযত্ন সংগীত পরিচালনায় এ ছবির গানগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লক্ষ করা যায়, ১৯৬৪ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে প্রায় ২০০ ছায়াছবির সংগীত পরিচালনা এবং ২০টি ছায়াছবি প্রযোজনা করে সত্য সাহা ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। সংগীতশিল্পী হিসেবে এবং সংগীত পরিচালনায় তার কৃতিত্বের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংস্থা ও ১৯৯৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় তার মৃত্যু হয়।
(সংগৃহীত)