‘সব্যসাচী’ লেখক সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মাতা হালিমা খাতুন। সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। সৈয়দ হক তার বাবা-মায়ের আট সন্তানের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠতম। সৈয়দ হকের শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুড়িগ্রাম মাইনর স্কুলে। এরপর তিনি ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাই ইংলিশ স্কুলে। তার পিতার ইচ্ছায় তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং ভর্তি হন পুরান ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে। ১৯৫০ সালে তিনি গণিতে লেটার নিয়ে ম্যাট্রিক (এসএসসি সমমান) পাস করেন। প্রথমে পিতার ইচ্ছায় বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করলেও পরবর্তীতে তিনি জগন্নাথ কলেজে মানবিক শাখায় ভর্তি হন এবং লজিকে লেটারসহ আইএ পাস করেন। অতঃপর তিনি ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত লেখাপড়া করে আর পরীক্ষা দেননি। আইএ পাস করার আগেই তার পিতার মৃত্যু হয় এবং মাসহ সাত ভাইবোনের দায়িত্ব তার ওপর এসে পড়ে। তিনি অর্থ উপার্জনের জন্য ছদ্মনামে স্কুল ও কলেজের নোটবই, সিনেমার চিত্রনাট্য, কাহিনী ও গান লিখতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধচলাকালে তিনি লন্ডন চলে যান এবং সেখানে মুক্তিযুদ্ধের নানা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি লন্ডনের বিবিসিতে খণ্ডকালীন চাকরি লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরটি তিনিই দৃপ্তকণ্ঠে বিবিসি রেডিওতে পাঠ করে শুনিয়ে বাঙালি জাতিকে আনন্দে আত্মহারা করে তোলেন।
তার জীবনের প্রথম মঞ্চনাটক- ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, যা এই পর্যন্ত ২০০তম রজনী সফল মঞ্চ অভিনয় সমাপ্ত করেছে। ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ তার মঞ্চসফল অপর একটি নাটক। তিনি শেকসপিয়রের বেশ কয়েকটি নাটক বাংলায় রূপান্তরিত করেন। ছোটগল্পের প্রায় প্রতিটিতে তার নিজস্ব ভাষা এবং স্বকীয়তা বিশেষভাবে পাঠকের মনোযোগ কাড়ে। ১৮ বছর বয়সে তার প্রথম ছোট গল্পের বই ‘তাস’ প্রকাশিত হয়। কল্পিত জনপদ জলেশ্বরীকে নিয়ে তিনি রচনা করেন, ‘জলেশ্বরীর গল্পগুলো’। জলেশ্বরী মূলত তারই জš§স্থান কুড়িগ্রাম।
সাহিত্যজীবনে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারে, যেগুলোর মধ্যে ‘বাংলা একাডেমি’ পুরস্কার, ‘আদমজী সাহিত্য’ পুরস্কার এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ‘একুশে পদক’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপাপ্ত হন। সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আনোয়ারা সৈয়দ হক। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সৈয়দ শামসুল হক ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। [ সংগৃহীত]