Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:44 pm

আজকের দিনে

আজ অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবস। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। পদাধিকার বলে তিনি ডাকসুর প্রথম সভাপতি। নোয়াখালী জেলার বিরাহিমপুর গ্রামে ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর তার জন্ম। তার বাবা মৌলবী ওবায়দুল্লাহ ছিলেন বাসিকপুর মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা। মোজাফফর আহমদ নোয়াখালীর ফরাশগঞ্জ হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক ও ফেনী কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে আইএ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৪ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

মোজাফফর আহমদ ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দেন। ১৯৫০-৫২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬১ সালে রিডার এবং ১৯৬৯ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যা ও পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সভায় তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণ ও ছাত্র হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং সরকারের গণবিরোধী দমননীতির তীব্র সমালোচনা করেন। ফলে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক বছরেরও বেশি সময় কারাভোগের পর ১৯৫৩ সালের ৫ মে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের শাসনতান্ত্রিক উপদেষ্টা এবং ১৯৫৬ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরূপে দায়িত্ব পালন করেন। মোজাফফর আহমদ ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী গণ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক রাওয়ালপিন্ডিতে আহূত গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা সেলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হন। তিনি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭৫ সালে কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় মোজাফফর আহমদ শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। জিয়াউর রহমান কর্তৃক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত হন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চাকরিতে ফিরে যান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন মোজাফফর আহমদ। ১৯৭৮ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসাবে পরিচিত স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয় তাকে।

[সংগৃহীত]