নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল বিকালের মধ্যে কোটাব্যবস্থা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় আজ সোমবার থেকে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
গতকাল রোববার দুপুর ১টায় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, রোববার বিকাল ৫টার মধ্যে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত না হলে সোমবার সকাল ১০টা থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র ধর্মঘট এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সব পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, রোববার সকালে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ৩২ দিন পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। আমরা আর অপেক্ষা করতে চাই না। আজ বিকাল ৫টার মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না করা হলে কাল থেকে সারা দেশের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট চলবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা হবে।’
কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দৃশ্যত ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বলেন, ‘বারবার এই আন্দোলন ঝামেলা মেটানোর জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল, পরিষ্কার কথা, আমি এটাই মনে করি, সেটা হলো বাতিল।’
কোটা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার কথাও ওইদিন বলেন সরকারপ্রধান। যদিও এখনও কমিটি গঠন হয়নি। গত সপ্তাহে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, কোটা বাতিলে কমিটি গঠনের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে পিএসসির আওতায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাঁচ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ।
নুরুল হক নূর বলেন, ‘সরকার যখন ডেকেছে, আমরা সাড়া দিয়েছি। ৭ মের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির কথা ছিল, কিন্তু এমনটা না হওয়ায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়েছে। বাংলার ছাত্রসমাজ তাদের অধিকার আদায়ে আর ছাড় দেব না। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না করা হয়, তাহলে কঠোর আন্দোলনে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন আমরা তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছি এবং আমাদের আন্দোলনকে স্থগিত করে আনন্দ মিছিল করেছি। কিন্তু তার ঘোষণার ২৭ দিন পার হয়ে গেলেও কোনো প্রজ্ঞাপন আমরা পাইনি। ছাত্রদের সঙ্গে কেন এমন প্রহসন করা হচ্ছে?’
বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক মুহম্মদ রাশেদ খান বক্তব্য দেন।
এর আগে বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয়ে মধুর ক্যান্টিন, লেকচার থিয়েটার ভবন, সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, নীলক্ষেত মোড় ঘুরে ভিসি চত্বর, ফুলার রোড, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর হয়ে শাহবাগ গিয়ে শেষ হয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ‘ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটার পরিমাণ ১০ শতাংশে কমিয়ে আনার দাবি তুলেছিল। কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে তা পূরণের দাবিও জানিয়েছিল তারা।
প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা বলার পর তারা এখন সেই প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দাবিতে রোববার দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে।

Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:11 pm
আজ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট
দিনের খবর,শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: