নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ মঙ্গলবার, পয়লা বৈশাখ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে গতকাল ১৪২৬ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বছর ১৪২৭। এর মধ্য দিয়ে জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করছে বাঙালি জাতি। পয়লা বৈশাখকে ঘিরে আজ বর্ণিল উৎসবে মাতবে সারা দেশ।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন ওই বাংলা সন।
১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথম দিকে ‘ফসলি সন’ নামে পরিচিত ছিল, পরে তা পরিচিত হয় ‘বঙ্গাব্দ’ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও পরে এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে তা বিশেষ মাত্রা পায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পয়লা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো ওই শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদ্যাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সর্বজনীন উৎসবে। পয়লা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারা দেশ। বর্ষবরণের এ উৎসব আমেজে মুখরিত থাকবে বাংলার চারদিক।
গ্রীষ্মের খরতাপ উপেক্ষা করে বাঙালি মিলিত হবে তার সর্বজনীন এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। দেশের পথে-ঘাটে, মাঠে-মেলায় ও অনুষ্ঠানে থাকবে কোটি মানুষের প্রাণের চাঞ্চল্য, আর উৎসবমুখরতার বিহ্বলতা।
পয়লা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব বলে উল্লেখ করে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ-উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করার আর কুসংস্কার ও কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার অনুপ্রেরণা পায় এবং জাতি হয় ঐক্যবদ্ধ।
নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। বুকভরা তেমনি প্রত্যাশা নিয়ে নতুন উদ্যমে ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি আরও সোচ্চার হবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মৌলবাদ ও জঙ্গিনিধনের দাবিতে।
নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করেছে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফর, জাতীয় জাদুঘর, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, কপিরাইট অফিস, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও বিসিক নববর্ষ মেলা আলোচনা সভা, প্রদর্শনী, কুইজ, রচনা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নত মানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব জাদুঘর ও প্রত্নস্থান সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়েছে এবং শিশু-কিশোর, ছাত্রছাত্রী, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুরা বিনা টিকিটে প্রবেশ করতে পারবে।
বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অভিজাত হোটেল ও ক্লাব বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করবে। প্রতিবছর বর্ষবরণে রাজধানী জুড়ে কর্মসূচী নেওয়া হলেও এবছর করোনা মহামারীর কারণে বর্ষবরণের সব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।
