আজ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলারের বিনিময় হার ঊর্ধ্বমুখী। বৃদ্ধি পেয়েছে গ্যাসের দাম। জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বন্যার ক্ষত। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে নতুন এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, হেড অব বিএফআইইউ ও নির্বাহী পরিচালকেরা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আগে সাধারণত সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুদ্রানীতি ঘোষণা করতেন। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া শুধু ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক আগে প্রতি ছয় মাসের আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করলেও গত দুই অর্থবছর তা এক বছরের জন্য করা হয়।

এবারের মুদ্রানীতি অনলাইনের পরিবর্তে সরাসরি ঘোষণা করবেন গভর্নর ফজলে কবির। বর্তমান গভর্নরের মেয়াদে এটি তার শেষ মুদ্রানীতি ঘোষণা।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরকার ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণ করে দিয়ে রেখেছে। ডলারের দামও ব্যাংকগুলোর কাছে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ব্যাংক খাত থেকে এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। ফলে মুদ্রানীতিতে বৈচিত্র্য দেখানোর কিছু নেই।

নতুন মুদ্রানীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এজন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব।

এবারের মুদ্রানীতিতে নতুন কোনো চমক আছে কি না, জানতে চাইলে প্রধান এ অর্থনীতিবিদ বলেন, নতুন কোনো চমক আপাতত নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই আমাদের বড় লক্ষ্য। পাশাপাশি কাক্সিক্ষত জিডিপি অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়টি আমরা নজর দেব।

আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশে, যা গত ৮ বছরের মধ্যে রেকর্ড।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ঋণে জোর দেবে। আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা আছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ জুন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকার নিট ৪১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। গত মে পর্যন্ত যা ছিল ৩২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। এর মানে শেষ সময়ে এসে ঋণ দ্রুত হারে বাড়ছে।

চলতি জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত এপ্রিল পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সরকারি-বেসরকারি মিলে জুন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, এপ্রিল পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

জানা গেছে, গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরের মেয়াদ আগামী ৩ জুলাই শেষ হবে। ইতোমধ্যে নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অর্থসচিব আব্দুর রউফ চৌধুরী। আগামী ৪ জুলাই নতুন গভর্নর হিসেবে যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দাপ্তরিক প্রয়োজনে তিনি ১২ জুলাই গভর্নর হিসেবে যোগ দেবেন। ৪ তারিখের পর থেকে গভর্নরের রুটিন কাজগুলো করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। এ বিষয়ে শিগগিরই এক সিদ্ধান্ত আসবে বলে মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০