আজ সমাবেশ চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল এনবিআর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: গত পাঁচ বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্র্মচারীকে পদোন্নতি বঞ্চিত করেছেন। বদলির ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। কর্মচারী থেকে সদস্য পর্যন্ত কেউ তার ভয়ে অন্যায়, অবিচারের মুখ খুলতে সাহস পাননি। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মামলার পর মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। আর তাকে হয়রানির দোহাই দিয়ে শেখ হাসিনার কাছে ভালো সেজে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ তিনবার বাড়িয়েছেন। এক কথায় এনবিআরে রাজত্ব কায়েম করেছেন। এমন অন্যায়, অবিচার, অত্যাচারে চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করেছেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে আগত এনবিআরের দুই প্রথম সচিব।

বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য অন্যায়, অবিচারের অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে গতকাল বুধবার সুবিধাবঞ্চিত ও হয়রানির শিকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন; যাতে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। সমাবেশে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের স্বৈরাচার অ্যাখ্যা দিয়ে তাদের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ কর্মচারীরা চেয়ারম্যান ও প্রথম সচিবের নেমপ্লেট খুলে ফেলেন। চেয়ারম্যানের ছবিতে জুতার মালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। হাসিনার লুটপাটের সহযোগী এই চেয়ারম্যান যাতে দেশ থেকে পালাতে না পারেন, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। আয়কর, শুল্ক ও আবগারিÑএই দুই ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান বানানোর দাবি জানানো হয়। চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের পদত্যাগ ও বিচারের দাবিতে আজ এনবিআরের সামনে সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এনবিআর থেকে সদ্য বিদায়ী ও এলপিআরে থাকা সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ড. এসএম হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় চেয়ারম্যান কক্ষে ছিলেন না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এনবিআরের বিভিন্ন ফ্লোরে বিক্ষোভ শেষে আবার এনবিআর চেয়ারম্যানের রুমের সামনে মিলিত হন।

অতিরিক্ত কমিশনার মাহমুদুল হাসান বলেন, সরকারের ব্লাড (রাজস্ব) সরবরাহকারী একক সংস্থা এনবিআর। এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি এনবিআরকে সংস্কার করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাই, যাতে আয়কর, মূসক ও কাস্টমস উইং থেকে যাতে চেয়ারম্যান বানানো হয়। সে জন্য এনবিআর থেকে নতুন সরকারের হাতে একটি স্মারকলিপি দেয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এনবিআরে ডেপুটেশনে কোনো চেয়ারম্যান আমরা চাই না। তিনি বুয়েটের শহিদ আবরার ফাহাদ ও কোটা আন্দোলনে শহিদ আবু ছায়েদের নামে এনবিআরের দুই হলের নামকরণের দাবি জানান।

অতিরিক্ত কমিশনার ও প্রথম সচিব ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এনবিআরে সংস্কার চাই। আমরা চাই না যে, আমাদের এখানে এসে কেউ ডিক্টেটরশিপ চালাক। আমাদের ক্যাডারের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান বানানো হলে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। আমরা কারও সাব-অর্ডিনেট নই। তারাও চাকরি করতে এসেছেন, আমরাও চাকরি করতে এসেছি। আমরা কাউকে ভয় করি না। আমরা সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায়কারী রাজস্ব সৈনিক। নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। আমরা চাই, সব স্বৈরাচারের পতন হোক, নিপাত যাক, আমাদের সংস্কার হোক।’

ড. এসএম হুমায়ুন কবীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কোনো ভয় নেই। আমি গতকাল তার বাসায় গিয়েছি। তিনি পলাতক। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছেন। কোনো গাড়িচালক স্বৈরাচার রহমাতুল মুনিমের সহযোগীদের গাড়ি চালাবেন না। এই স্বৈরাচারী চেয়ারম্যান কিছু কুখ্যাত উপসচিব নিয়ে এসেছেন। তিনি এই কুখ্যাত উপসচিবদের নেমপ্লেট নামিয়ে ফেলতে সবাইকে অনুরোধ করেন। আপনারা তাদের বলবেন, আপনারা (উপসচিব) রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছেন, ড. ইউনূসের ক্ষতি করেছেন। আপনারা আর এনবিআরে আসবেন না।’ চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমাদের পদোন্নতি দেন, তিনি মনে করেন যেন এটা তার দয়া। তিনি আমাকে বলেছেন, আমি নাকি রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছি। সে জন্য আমাকে পদোন্নতি দেননি। এনবিআর সদস্যদের তিনি পাওয়ারলেস করে হাত, পা কেটে রেখে দিয়েছেন। সদস্য হলো গ্রেড-১ ও গ্রেড-২-এর পদ। তিনি সদস্যদের গ্রেড-২-তে পদোন্নতি দেন না। কুখ্যাত রাজাকার, স্বৈরাচারের দোসর মুনিম রাষ্ট্রের সম্পদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একের পর মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। মুনিম যেন কোনো বিমানবন্দর, স্থলবন্দর দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারেÑসেজন্য পদক্ষেপ নিতে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নজর রাখার অনুরোধ জানান।’

এনবিআর সদস্য হোসেন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সরকারি কর্মকর্তা, সরকারের জন্য কাজ করব। আইনসঙ্গত নির্দেশ আমরা পালন করব। এই চেয়ারম্যান আমাদের পুতুল বানিয়ে রেখেছেন। যখন কোনো কথা বলতে চেয়েছি, প্রতিটি ন্যায়সঙ্গত কথা খুব খারাপ ব্যবহারের মাধ্যমে সেই কথা বলতে দেয়া হয়নি। ভরা মিটিংয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার অলিগার্ল যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছেন, সে বিষয় টেক করার বিষয়ে যখন রাজস্ব সভায় কথা বলেছি, তা তার এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বের হয়ে গেছে। এই কাজগুলো যারা করেন, তারা যদি এনবিআরের কর্তা হয়ে দাঁড়ান, তাহলে এনবিআর কখনও এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের এখন ধৈর্য ধরতে হবে। আইন হাতে নেয়া যাবে না।’
এনবিআরের একাধিক কর্মচারী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘পদ খালি থাকা সত্ত্বেও এই চেয়ারম্যান পদোন্নতি দেননি। কথা বললে চাকরির ভয় দেখানো হতো। তার পাঁচ বছরে কোনো কর্মচারীকে পদোন্নতি দেননি। পদোন্নতি না পেয়ে কষ্টে একজন মারা গেছেন। ন্যায্য অধিকারের কথা বললেও হয়রানি করা হতো।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০