মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বিশ্বজুড়ে চলছে কভিড-১৯ করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় ২০০টি দেশে আঘাত হেনেছে এ প্রাণঘাতী ভাইরাস। অন্যান্য দেশের মতো ভাইরাসটির কবলে পড়েছে বাংলাদেশও, যার কারণে চলছে লকডাউন।
বন্ধ রয়েছে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এর জের ধরে পুঁজিবাজার বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। লেনদেন চালু না হলেও নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে থাকা নগদ টাকা ফেরত চান তারা।
### ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে, চাইলেই এ অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া সম্ভব
করোনার মহামারি ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে পুঁজিবাজারে লেনদেন। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন সেইসব বিনিয়োগকারী যাদের শেয়ার ব্যবসা ছাড়া আয়ের অন্য কোনো খাত নেই। দফায় দফায় লকডাউনের সময় বাড়ানোয় বিপাকে পড়েছেন তারা।
ভুক্তভোগী এসব বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তাদের অনেকের অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ রয়েছে। লেনদেন বন্ধ থাকায় আটকে রয়েছে তাদের এ অর্থ। তাই লেনদেন চালু না হলেও নগদ এ অর্থ ফেরত চান তারা। ক্রান্তিকালে বিনিয়োগকারীরা এ অর্থ কাজে লাগাতে চান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিনিয়োগকারী আফরোজা বেগম বলেন, করোনাকালে আমাদের আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। দেশ ও জাতির কথা বিবেচনা করে লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে, এটা ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ এ সময়ে লেনদেন চালু থাকলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়বে। আমরা সেটা চাই না। তবে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আমাদের বিও অ্যাকাউন্টে যে নগদ টাকা রয়েছে, তা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা উচিত। এতে আমরা উপকৃত হব।
বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হলে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক শেয়ার বিজকে বলেন, এটা বিনিয়োগকারীদের যোগ্য দাবি। অনেক বিনিয়োগকারী এরই মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অর্থ পেলে তারা এখন যে আর্থিক কষ্টের মধ্যে রয়েছেন, তা কিছুটা হলেও সামাল দিতে পারবেন। এখন ব্যাংকে স্বল্প পরিসরে লেনদেন চালু রয়েছে, যে কারণে হাউস কর্তৃপক্ষ চাইলে সহজেই বিনিয়োগকারীদের এ অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দিতে পারেন।
এদিকে বিষয়টিতে সায় রয়েছে ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তাদেরও। তাদের মতে, যাদের অর্থ তারা নেবে, এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তারা ইচ্ছা করলেই কাজটি করতে পারছেন না। এ জন্য মালিকপক্ষের অনুমতি লাগবে। আর সরকারের অনুমতি না পেলে মালিকদেরও কিছু করার নেই।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে উত্তোলনযাগ্য টাকা রয়েছে। তারা এ টাকা তুলে নিতে পারলে আমাদেরও ভালো লাগবে। কারণ সারা বছর আমরা এসব বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কাজ করি। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে তারা ভালো থাকলে আমাদেরও ভালো লাগে।
জানা যায় লকডাউনের আগে টানা দরপতনের কারণে সূচক ও বাজার মূলধন আশঙ্কাজনকহারে কমে যায়। বছরের ব্যবধানে বাজার মূলধন হ্রাস পায় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। কমে ছোট-বড় সব ধরনের শেয়ার ও ইউনিট দর। পরবর্তীকালে ফ্লোরপ্রাইস নির্ধারণ করে পতন ঠেকায় বিএসইসি। সেই সময় লোকসানের ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ রেখে দেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার এবং ইউনিটের বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ১৯ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।
ফ্লোরপ্রাইস নির্ধারণের আগে তা কমে দাঁড়ায় দুই লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে বাজার মূলধন কমেছে দুই লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এদিকে ধারাবাহিক পতনের জেরে এ সময়ের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক কমে গেছে প্রায় এক হাজার ৯০০ পয়েন্ট।