আটকে যাচ্ছে বিদ্যুৎ আমদানির বিল ও পিডিবির ঋণ শোধ

ইসমাইল আলী: ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। পাঁচটি কেন্দ্র থেকে এ বিদ্যুৎ আসে। তবে এসব কেন্দ্রের বিল বকেয়া পড়েছে সাত থেকে ৯ মাস। এছাড়া পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি ছয় মাস ধরে দিতে পারছে না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। মূলত ডলার সংকটে আটকে গেছে এসব বিল ও কিস্তি পরিশোধ। সব মিলিয়ে বকেয়া পড়েছে ৫২২ মিলিয়ন ডলার।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগকে এক চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানায় পিডিবি। এতে প্রয়োজনীয় ডলার সহায়তা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে চিঠি দিতে বলা হয়।

চিঠির তথ্যমতে, বর্তমানে ভারত থেকে বহরমপুর-ভেড়ামারা গ্রিডে আসছে এক হাজার মেগাওয়াট আর ত্রিপুরা থেকে আসে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ভারত থেকে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধে রিবেট সুবিধা পাওয়া যায়। তবে বিলম্বে বিল পরিশোধে দিতে হয় সারচার্জ। একইভাবে এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির আওতায় বাস্তবায়িত পিডিবির বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি (আসল ও সুদ) পরিশোধে বিলম্ব হলে দিতে হয় ডিফল্ট সুদ।

পিডিবি কর্তৃক রিবেট সুবিধা গ্রহণের জন্য আমদানিকৃত বিদ্যুৎ বিলের বিপরীতে ও ইসিএর আওতায় বাস্তবায়িত বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঋণ পরিশাধে নির্ধারিত সময়ে তহবিল স্থাপন করা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ডলার সংকটে বিল পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে বহির্বিশ্বে পিডিবির পাশাপাশি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। ইসিএর আওতায় বড়পুকুরিয়ার ২৭৫ মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০ম কিস্তি পরিশোধে তহবিল জমা দেয়া হলেও বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতায় সোনালী ব্যাংকের ওয়াপদা শাখা তা পরিশোধ করতে পারছে না।

চিঠিতে বিদ্যুৎ আমদানির বকেয়া বিল ও ঋণের কিস্তির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত এনভিভিএন (এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভ্যাপার নিগম লিমিটেড) থেকে আমদানি করা হয় ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ আমদানি চুক্তির আওতায় মাসে গড়ে ছয় দশমিক ১১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হয়। এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে এ বিল পরিশোধ করা হলেও তা সাত মাস বকেয়া পড়েছে। এক্ষেত্রে বকেয়া পড়েছে ৪২ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলার।

এনভিভিএনের আরও দুই কেন্দ্র থেকে আসে যথাক্রমে ৩০০ ও ১৬০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ। এ দুই কেন্দ্রের জন্য মাসে গড়ে পরিশোধ করতে হয় ১৪ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার ও সাত দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এ দুই বিল পরিশোধ করার কথা। তবে ৩০০ মেগাওয়াটের বিল বকেয়া পড়েছে আট মাস ও ১৬০ মেগাওয়াটের সাত মাস। দুই কেন্দ্রে মোট বকেয়া পড়েছে যথাক্রমে ১১৫ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার ও ৫৪ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার।

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত উৎস ছাড়াও পিটিসি ইন্ডিয়া থেকে ২০০ ও সেম্বকর্প ইন্ডিয়া থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। এ দুই কেন্দ্রের জন্য মাসে গড়ে পরিশোধ করতে হয় ১১ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার ও ১৩ দশমিক ৮১ মিলিয়ন ডলার। রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে এ দুই বিল পরিশোধ করার কথা। তবে ডলার সংকটে দুটি বিলই ৯ মাস করে বকেয়া পড়েছে। এতে দুই কেন্দ্রে মোট বকেয়া পড়েছে যথাক্রমে ১০১ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার ও ১২৪ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার।

এর বাইরে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনার সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের জন্য দেশটির পাওয়ার গ্রিড করপোরেশনকে মাসে এক দশমিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার দিতে হয়। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এ বিল পরিশোধের কথা থাকলেও ডলার সংকটের কারণে সাত মাস ধরে তা বকেয়া পড়েছে। এতে মোট বকেয়া পড়েছে ১০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে ডলার সংকটের ছয় মাস ধরে পাঁচ প্রকল্পের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ। প্রকল্প পাঁচটির মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প ও শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কিস্তি এইচএসবিসির মাধ্যমে পরিশোধ করার কথা। এ তিন প্রকল্পের মাসিক কিস্তি যথাক্রমে এক মিলিয়ন, সাড়ে তিন মিলিয়ন ও দুই দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। এতে ছয় মাসে বকেয়া পড়েছে যথাক্রমে ছয় মিলিয়ন, ২১ মিলিয়ন ও ১৬ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার।

পিডিবির অপর দুই প্রকল্প হলো বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। এ দুই প্রকল্পের মাসিক কিস্তি আড়াই মিলিয়ন ডলার করে মোট পাঁচ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়ার কিস্তি সোনালী ব্যাংক ও ঘোড়াশালের কিস্তি রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করার কথা। তবে ডলার সংকটে এ দুই প্রকল্পে কিস্তি বকেয়া পড়েছে ১৫ মিলিয়ন করে মোট ৩০ মিলিয়ন ডলার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিডিবির কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে বিদ্যুৎ আমদানি বিল ও ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে পিডিবি। এতে পিডিবি ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে।

তাই বিষয়টি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে এতে ডলার সংকট সমাধান হবে, তা নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০