নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক মামলায় আটক সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গতকাল সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আবেদন জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বেলা ২টা ১৫ মিনিটে ডা. জাফরুল্লাহসহ সাতজন প্রতিনিধি তার সঙ্গে দেখা করেন।
এ সময় প্রধান রেজিস্ট্রার বলেন, আপনাদের সব বক্তব্য প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে অবহিত করব।
পরে সাংবাদিকদের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আজকে যদি কাজ না হয়, এটাও জানিয়ে দিতে চাই, আমরা উনার (প্রধান বিচারপতি) বাসভবনে যাব। ঘেরাও করে বসে থাকব, যতক্ষণ না উনি আমাদের কথা শুনেন।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা রয়েছে, সেটি টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আপনাদের। আমরা ১৮ জন ব্যক্তি একটা দরখাস্ত করেছিলাম। সেখানে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার সব ছাত্রের জামিন চেয়েছিলাম। আজকে তিন মাস হয়ে গেছে জামিন হয় না। তবে সৌভাগ্যের বিষয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সাত দিনের মধ্যে জামিন হয়ে গেল। রোজিনার তথাকথিত অপরাধের চেয়েও ছাত্রদের অপরাধ কম। আমরা বিচারে হস্তক্ষেপ নয়, আবার দীর্ঘসূত্রতাও চাই না। জেলা কোর্টে এই মামলাটা আছে, তারা যেন সেখানে রায় দেয়।
মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘটনায় মতিঝিলে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের সংঘর্ষের ঘটনায় মতিঝিল থানায় প্রথম মামলা হয়। এরপর গত ২৭ মার্চ প্রেস ক্লাবের সামনে ধস্তাধস্তির ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়। উভয় মামলায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের আসামি করা হয়। এ মামলায় বেশ কয়েকবার জামিন চেয়ে জামিন না মেলায় প্রধান বিচারপতির কাছে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করেন তারা।
গত ৪ মে সরকারবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার ছাত্রদের ঈদের আগে জামিনে মুক্তির দাবিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বরাবর চিঠি দেন ১৮ বিশিষ্ট নাগরিক। তারা হলেনÑগণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান, আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, অধ্যাপক পারভীন হাসান, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, নারী নেত্রী শিরিন হক, লেখক-নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, মুক্তিযোদ্ধা ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
গতকাল দুপুর ১২টায় শাহাবাগ জাদুঘরের সামনে গ্রেপ্তার ৫৪ জন ছাত্রের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে উদ্ভিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাবেশ হয়েছে।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান গণস্বাস্থের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ।
আজ (মঙ্গলবার) থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, একটা জাতিকে ধ্বংস করতে তার শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা প্রয়োজন। দয়া করে এটি করবেন না। দরকার হলে শিক্ষার্থীরা দুই বা তিন শিফটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে।
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটি (আওয়ামী লীগ সরকার) জালিম সরকার। মানবতার প্রতি তাদের কোনো কর্নপাত নেই। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের ভালোবাসা নেই। দেশে সব চলে কিন্তু তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে আজকের এই সমাবেশে অনেক শিক্ষার্থী থাকত। তাদের যতদিন মুক্তি না দেবে ততদিন আমরা রাজপথে থাকব উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দল না। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা ছাত্র। আপনারা যারা রাজনৈতিক দল করেন, আপনাদের এই ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, তাদের নির্যাতন করা হয়েছে। একর পর এক মিথ্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিচ্ছে। ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে আমরা আগামীতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। এ সরকার ৫৪ শিক্ষার্থীর যতদিন মুক্তি না দেবে ততদিন আমরা রাজপথে থাকব।