Print Date & Time : 30 June 2025 Monday 11:10 pm

আটঘরে তৈরি কাঠের নৌকা যাচ্ছে জার্মানিতে

প্রতিনিধি, বরিশাল: নৌকার জন্য বিখ্যাত পিরোজপুরের নেছারাবাদের আটঘর। আটঘরে তৈরি এই কাঠের নৌকা এবার যাবে জার্মানিতে। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের আগস্টে হস্তান্তর করা হবে। প্রথম চালানে ১০টি নৌকা যাবে।

এই তথ্য জানিয়েছেন নেছারাবাদ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘর বাজারসংলগ্ন নৌকার মিস্ত্রি আজিজুল হক নৌকা তৈরির অর্ডার পেয়েছেন। ইতোমধ্যে দুটি নৌকা তৈরিও করেছেন। বাকিগুলোর কাজ চলছে। রাকিব হোসেন বলেন, দুই মাস আগে জার্মানির এক নাগরিক এসেছিলেন আমাদের এলাকা ঘুরে দেখতে। তিনি নৌকা দেখে পছন্দ করেন এবং আজিজুল হকের কাছ থেকে তৈরি করে জার্মানিতে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
নৌকার কারিগর আজিজুল হক বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে নৌকা তৈরি করি। সাধারণত ডিঙ্গি ও টালাই বানাতাম। কয়েকদিন আগে জার্মানির এক লোক এসে ১০টি নৌকার অর্ডার দেন। এটিই আমার প্রথম বিদেশে অর্ডার। এর আগে আমাদের এলাকায় নৌকা তৈরির বিদেশ থেকে অর্ডার কেউ পায়নি। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে ১০ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছে। তিনি অগ্রিম টাকাও দিয়ে গেছেন। মেহগনি গাছ দিয়ে তাদের দেখানো ডিজাইন অনুসারে নৌকা তৈরি করছি।

প্রথম দফায় ১০টি যাবে। এরপরে আরও ২০টি নৌকা বানাতে হবে তবে ভিন্ন ডিজাইনে। তিনি আরও বলেন, জার্মানের সেই নাগরিকের সঙ্গে বরিশালের এক স্যার আসছিলেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে এসে একবার করে কাজের অগ্রগতি দেখে যান। আজিজুল হক বলেন, জার্মান নাগরিক যা বুঝিয়েছেন এই নৌকা নিয়ে সেখানকার মার্কেটে দেখাবেন। বাজারে চললে আরও নৌকা তৈরি করে নেবেন। নৌকাগুলো ওখানকার কোনো নদী বা খালে চলবে না। এসব দিয়ে বসার জন্য শৌখিন আসন বানাবেন।

আটঘর বাজারের ব্যবসায়ী শফিক মোল্লা বলেন, জার্মানির ওই পর্যটক যেদিন এসেছিলেন আমরা সবাই ছিলাম। তিনি নৌকা দেখে পছন্দ করেছেন এবং তার ডিজাইন দেখিয়ে গেছেন। সে অনুসারে আমাদের বাজারের মিস্ত্রি আজিজুল হক কাজ করছেন। কয়েকটি তৈরিও করেছেন। বাকি যেগুলো আছে সেগুলো তৈরির কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন।

জার্মান নাগরিকের পক্ষে নৌকা তৈরির কাজ তদারকি করা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে। এ জন্য আমরা বিস্তারিত জানাতে চাইছি না। তবে সবগুলো নৌকা পুরোপুরি তৈরি হলে হস্তান্তরের আগে বিস্তারিত জানাব।

নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, নেছারাবাদ উপজেলা বিভিন্ন কারণে সারাদেশেই সমাদৃত। বিশেষ করে আটঘরের নৌকার হাট খুব বিখ্যাত। সেখান থেকে জার্মানিতে নৌকা যাচ্ছে সংবাদটি অত্যন্ত আনন্দের। এতে করে বাংলাদেশের পণ্যের বিশ্ববাজার যেমন তৈরি হবে তেমনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দুয়ার খুলবে। আমি ওই কারিগরের সঙ্গে কথা বলব। তার যেকোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, আমাদের ঐতিহ্যবাহী নৌকা যে বিশ্বমানের হতে পারে তা এভাবে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাজার তৈরি করুক।

উল্লেখ্য, পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার আটঘর নৌকার হাট দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাট। এই অঞ্চলের পেয়ারা, লেবু ও আমড়ার বাগান তদারকির জন্য ছোট ছোট নৌকার খুব চাহিদা। এছাড়া জালের মতো খাল থাকায় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এখনো নৌকা। প্রতি মৌসুমে এই হাটে ৩০ কোটি টাকারও বেশি নৌকা বিক্রি হয়।