Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 8:24 pm

আটা-ময়দায় তৈরি হচ্ছে নকল ওষুধ, গ্রেপ্তার ১০

নিজস্ব প্রতিবেদক: নকল ওষুধ তৈরির অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা সবাই হিমালয় ল্যাবরেটরিজের। গতকাল ঢাকার মিটফোর্ড, কুমিল্লার কাপ্তান বাজারের হিমালয় ল্যাবরেটরিজ ও সাভারে প্রতিষ্ঠানটির গোডাউনে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন লালবাগের গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে। অভিযানে প্রায় ২২ লাখ ভেজাল ওষুধও জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার ১০ জন হলেন হিমালয় ল্যাবরেটরিজের মালিক মোর্শেদ আলম শাওন (৩৫), সাভার গোডাউনের কবির হোসেন (৪৪), কুমিল্লায় নকল ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটর আল আমিন চঞ্চল (৩৫), নকল ওষুধ প্যাকেজিংয়ে জড়িত মো. নাজিম উদ্দিন (৪২), গোডাউন রক্ষণাবেক্ষণকারী মো. তৌহিদ (২৮)। এছাড়া গোডাউন ও ওষুধ তৈরি কারখানার অপারেটর ও শ্রমিক আইনুল ইসলাম (৩২), মো. সাগর (১৯), মো. আবির (২১), মো. রুবেল (২৩) ও মো. পারভেজ (৩২)।

গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, অভিযানে আমরা দেখতে পাই, প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি ৯টি ব্র্যান্ডের ওষুধ নকল করছে। জব্দ করা ওষুধের মধ্যে রয়েছেÑইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যানটোনিক্স-২০ এমজি ৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৫৬টি, স্কয়ারের সেকলো ২০ চার লাখ ১০ হাজার ৪০০টি, দি একমি ল্যাবরেটরিজের মোনাস (১০) ৫৮ হাজার ৫০টি, হেল্থকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সার্জেল ক্যাপসুল ৯৬ হাজারটি, অপসোনিন ফার্মার ফিনিক্স (২০) ৫৮ হাজার ৮০০টি, কুমুদিনি ফার্মার অ্যান্টিবায়োটিক দিজা ছয় হাজার ২৪০টি, আমবে (অসনবব) ফার্মাসিউটিক্যালসের গুরফ-৫০০ ছয় হাজার ৪৮০টি, জেনিথের ন্যাপ্রক্সেন প্লাস ৪১ হাজার ৪০০টি ও ব্রোনসন-ইউএসএ’র জিবি-৬০ তিন হাজারটি।

তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি ফয়েল পেপার দিয়ে সুন্দর করে এসব ওষুধ মোড়কজাত করছে। বোঝার কোনো উপায় নেই, এটা আসল না নকল। এ ওষুধের গুণগত মান বলতে কিছুই নেই। আটা বা ময়দার সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি এসব নকল ওষুধ প্যাকেজিং করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তিনি বলেন, আমরা এসব ওষুধ পরীক্ষা করে দেখব, কী পরিমাণ ক্ষতিকারক উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। আদৌ এর কোনো গুণগত মান আছে কি না।

তিনি আরও বলেন, জব্দ করা ওষুধগুলোর মধ্যে অনেক অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, যা সামনের দিনগুলোয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকারীদের জন্য ভয়াবহ বার্তা বহন করছে। বাংলাদেশে করোনার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে এসব ভেজাল অ্যান্টিবায়োটিক। দেশে সর্বাধিক ব্যবহƒত ওষুধ হচ্ছে ওমিপ্রাজল গ্রুপের গ্যাসের ওষুধ, যা এখন ব্যাপকহারে নকল হচ্ছে। এটা খুবই খারাপ বার্তা দিচ্ছে আমাদের।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায়ই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভেজাল ও নকল ওষুধের লাগাম টানতে এবং নজরদারির ক্ষেত্রে জনসাধারণ, কোম্পানিসহ সবারই উচিত সচেতন হওয়া। নিজস্ব ওষুধের বাইরে আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে অন্য ওষুধ বা ভেজাল ওষুধ তৈরি করতে না পারে, সেজন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।’

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, গত ছয় মাসে ভেজাল ওষুধ তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৪টি। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাগুলো করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোয় মামলা ও অভিযান আরও বাড়বে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, যে ওষুধগুলো জব্দ করা হয়েছে, তার সবই দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের। আমরা আহ্বান জানাব, নামিদামি কোম্পানিগুলো যেন আমাদের সহযোগিতা করে। তারা যদি কপিরাইট আইনে মামলা করে, তাহলে আমাদের জন্য তদন্ত ও জালিয়াত চক্রকে ধরা সহজ হবে।

কোন এলাকায় এসব নকল ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, বিশাল এ চক্র। তারা ঢাকাকে এড়িয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রেপ্তারদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করব। আদালত কর্তৃক রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদে জানার চেষ্টা করা হবেÑকত দিন ধরে কী পরিমাণ নকল ও ভেজাল ওষুধ তারা বিপণন ও তৈরি করেছে।’

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং ভেজাল বা নকল হওয়া নামিদামি কোম্পানিগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবাই একত্রে কাজ করলেই এ চক্রকে ধরা এবং ভেজাল বন্ধ করা সহজ হবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জনবল খুবই কম। তাদের গোয়েন্দা কার্যক্রমও নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা হয়তো সামনের দিনগুলোয় গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করতে পারে। আমরা কিছুদিন আগেও ভেজাল ও নকল ওষুধ তৈরি করে এমন ৭৯টি আয়ুর্বেদিক কারখানার একটি তালিকা দিয়েছিলাম। তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।’