Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:07 am

আট কর্মদিবসে নামজারি সম্পন্নে পরিপত্র জারি

আয়নাল হোসেন: ই-নামজারি সহজ করতে জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় তিন কপি দলিল সম্পাদন করতে হবে। এতে নামজারির জন্য আলাদাভাবে আবেদনের প্রয়োজন নেই। আট কর্মদিবসের মধ্যে এই নামজারি সম্পন্ন হবে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়, ভূমি হস্তান্তর দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক তিন কপি দলিল সম্পাদন করতে হবে। তার মধ্যে একটি কপি দলিলগ্রহীতা, দ্বিতীয় কপি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সংরক্ষিত থাকবে এবং তৃতীয় কপি ও এলটি নোটিসের একটি পরিচ্ছন্ন কপি সাব-রেজিস্ট্রার সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা সার্কেল ভূমি অফিসে পাঠাতে হবে। এতে আরও বলা আছে, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে দলিলের কপি এবং এলটি নোটিস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে প্রাপ্ত দলিলের ভিত্তিতে ই-নামজারি নামে বর্ণিত রেজিস্টার-৯ (দ্বিতীয় খণ্ড)-এ যথাযথভাবে এন্ট্রি হতে হবে। পরিপত্রের গ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ই-নামজারির আবদনের মতো প্রাপ্ত দলিলের কপি এবং এলটি নোটিস একত্র করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-নামজারির জন্য মিস কেস দায়ের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দলিলগ্রহীতার থেকে আলাদা আবেদনের আবশ্যকতা নেই।

পািরপত্র অনুযায়ী, নামজারি বা ই-নামজারি খতিয়ানের ভিত্তিতে জমির দলিল নিবন্ধন সম্পন্ন হলে এবং এর ভিত্তিতে মালিকানা পরিবর্তন হলে সে ক্ষেত্রে গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে সাধারণভাবে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই। ঙ অনুচ্ছেদ মতে, বিবেচ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন বা পৌর ভূমি অফিস, সার্ভেয়ার বা কানুনগো কর্তৃক সরেজমিন তদন্তের আবশ্যকতা নেই। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী নামজারি ফি ও সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করা এবং দলিল অবিকল নকল কপিসহ উপস্থিত হয়ে শুনানি গ্রহণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চার কার্যদিবসের মধ্যে সময় দিয়ে দলিলগ্রহীতাকে ই-মেইল বা এসএমএস পাঠাতে হবে।

পরিপত্রের ছ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শুনানিকালে অনুচ্ছেদ ঘ-এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের বিশেষ সিল এবং ‘শুধুমাত্র সহকারী কমিশনার, ভূমি অফিসের নামজারি কার্যে ব্যবহারের জন্য’ লেখা যুক্ত দলিলের অনুলিপির সঙ্গে দলিলগ্রহীতার কাছে রক্ষিত দলিলের সাযুজ্য পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া দলিলের কপি এবং এলটি নোটিস সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পৌঁছানোর তারিখ থেকে পরবর্তী আট কার্যদিবসের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন নিশ্চিত করতে হবে। আর নামজারি ফি ও সার্ভিস চার্জ পরিশোধিত হলে সর্বোচ্চ আট কার্যদিবসের মধ্যে নামজারি কেসটি নিষ্পত্তি করতে হবে।

নামজারি মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য প্রস্তুত হওয়ার পর নামজারির ফি ও সার্ভিস চার্জ পরিশোধিক না হলে মালিককে তা পরিশোধের জন্য পুনরায় ই-মেইল বা এসএমএস দিতে হবে। যেসব সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মধ্যে দলিল নিবন্ধন-সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি যাচাই করতে অনলাইন সংযোগ স্থাপিত হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে নিবন্ধন বা ই-রেজিস্ট্রেশনের জন্য অনলাইনে খতিয়ান যাচাইপূর্বক মালিকানার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর জমি হস্তান্তরের দলিল নিবন্ধন সংশ্লিষ্ট দলিলের তথ্যাদি যাচাই করে সঠিকতা নিরূপণ সাপেক্ষে নামজারি সম্পন্ন করবেন।

প্রাথমিকভাবে সাভার উপজেলায় সব নামজারি খতিয়ান ও উত্তরাধিকার সনদ অনলাইনে আপলোড ও ই-রেজিস্ট্রেশনের কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করতে হবে। যেসব সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের মধ্যে অনলাইনভিত্তিক পদ্ধতি বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, সেসব অফিসে সঙ্গে সঙ্গে উপরোল্লিখিত বিধান কার্যকর হবে। স্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারজনিত কার্যক্রমে হিজড়া সন্তানদের সম্পত্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মূল রেকর্ডীয় খতিয়ানের কোনো উত্তরাধিকার কর্তৃক জমি হস্তান্তর দলিল সম্পাদন হলে অনলাইনে উত্তরাধিকার সনদ যাচাই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীদের বণ্টন দলিলের হিস্যা অনুযায়ী বর্তমানে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করে ২৮ দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করতে হবে।

পরিপত্রে আরও জানানো হয়, বণ্টন দলিল ব্যতীত জমি হস্তান্তরে উত্তরাধিকার বিধান অনুযায়ী প্রতিটি দাগের হিস্যা মোতাবেক হস্তান্তর দলিল সম্পাদন আইনসিদ্ধ। এরূপ ক্ষেত্রে হিস্যা মোতাবেক জমি হস্তান্তর না করে কোনো উত্তরাধিকারী একটি দাগের পূর্ণ অংশ বিক্রয় করলে উক্ত দলিল বুনিয়াদে নামজারি আইনসিদ্ধ হবে না। সে ক্ষেত্রে দলিল গ্রহীতা ও সংশ্লিষ্ট সব উত্তরাধিকারকে নোটিস প্রদান করে এবং শুনানি গ্রহণ করে সিদ্ধ দলিল গ্রহীতাকে লিখিতভাবে জানাতে হবে।

সর্বশেষ নামজারি খতিয়ানের তথ্যের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো গরমিল পাওয়া গেলে কেবল সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মালিককে নোটিস দিয়ে শুনানি গ্রহণ করা যাবে। শুনানি শেষে নামজারি করা সম্ভব না হলে দলিল গ্রহীতাকে দলিলের সুনির্দিষ্ট গরমিল সম্পর্কে লিখিত আদেশ দিয়ে প্রয়োজনীয় দলিলের ভ্রম সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। এভাবে মিস কেসটি নিষ্পত্তি করতে হবে এবং দলিল গ্রহীতাকে আদেশের কপি অবশ্যই হস্তান্তর করতে হবে। হস্তান্তর দলিলে গরমিলের সুনির্দিষ্ট বিষয়টি ই-নামজারি সিস্টেমে প্রতিবেদাকারে বিস্তারিত উল্লেখ করে আলাদাভাবে দাখিল করতে হবে।